টাঙ্গাইলে ৫ শতাধিক রেস্তোরাঁ ও বহুতল ভবন অগ্নিঝুঁকিতে ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বেইলি রোডের মতো টাঙ্গাইলের পাঁচ শতাধিক হোটেল রেস্তোরাঁসহ বহুতল ভবনগুলো অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের অনেক বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে রেস্তোরা। অপরিকল্পিতভাবে অনেক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ভবনে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা না থাকাসহ এসব রেস্তোরার ভবনে একটা মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। আবার অনেক ভবনে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাসহ ফায়ার সেফটি প্ল্যানও নেই। রেস্তোরাগুলোতে পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার নেই। অনেকেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করছে। আবার অনেকে এলপিজি গ্যাসের পরিবর্তে উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করছে। এ সব ভবন ও রেস্তোরায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে বাইরে বের হওয়ার তেমন সুযোগ নেই। তাই বহুতল ভবন ও রেস্তোরা করার আগে সকলকে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। এ দিকে টাঙ্গাইলে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় চার রেস্তোরার মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার (৩ মার্চ) বিকেলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন মুহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও নির্বাপকের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত পরিমান না থাকায় এবং ফায়ার লাইসেন্স না থাকায় পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের সুরুচি রেস্টুরেন্টকে এক লাখ টাকা, সুগন্ধা ও ঝাউবন রেস্টুরেন্টকে ২০ হাজার টাকা করে এবং সেফাত রেস্টুরেন্টকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয় কলেজ শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, বহুতল ভবন ও অভিজাত রেস্তোরা করার আগে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। শহরের অনেক বহুতল ভবন ও রেস্তোরায় কোনো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নেই। তাই সকলকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। জেলা রেস্তোরা ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জানান, সমিতির আওতায় ১৬০টি রেস্তোরা রয়েছে। এর বাইরেও জেলায় প্রায় চার শতাধিক রেস্তোরা আছে। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ওয়ারহাউস ইন্সপেক্টর মো. রবিউল আওয়াল বলেন, রোববার যে কয়টা রেস্তোরা পরিদর্শন করেছি তার প্রত্যেকটি অগ্নিনির্বাপনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেক ভবনে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেই। এছাড়াও অনেক ভবনে একটিমাত্র সিঁড়ি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া যে সমস্ত ভবন করা হচ্ছে তাদের সেফটি প্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের জন্য প্রতিনিয়ত নোটিশ দেয়া হয়। যারা এই আদেশ অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ১০ তলা কোনো ভবনে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আমাদের নেই। এ বিষয়ে ঢাকায় চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান বিন মুহাম্মদ আলী বলেন, রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ এবং নির্বাপণের যে ব্যবস্থাগুলো রয়েছে সেখানে কোন ঘাটতি আছে কিনা বা ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে মনিটর করা হচ্ছে। তাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করার পাশাপাশি আমরা অর্থদণ্ড প্রদান করছি। তিনি আরও বলেন, রোববার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শহরের চারটি স্বনামধন্য রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তাদের ফায়ার লাইসেন্স আছে কিনা, ফায়ার ইক্সটিংগুইসার, সিওটু এক্সটিংগুইসার ও সেখানে ফায়ার নির্বাপক পয়েন্ট এবং ওয়াটার সোর্সের পয়েন্ট আছে কিনা সবই লক্ষ্য করেছি। অনেক রেস্টুরেন্টে এলপিজি গ্যাসের পরিবর্তে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করছে। চারটি রেস্টুরেন্টকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্য আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রুবেল আহম্মদ, এশিয়ান টেলিভিশন প্রতিনিধি অমিত হাসান আবির, ভোরের কাগজ প্রতিনিধি জুটন বনিক, সময়ের আলোর প্রতিনিধি নাজমুল আহম্মেদ,নবচেতনা প্রতিনিধি অমিত হাসান অপু, আমাদের নতুন সময় প্রতিনিধি হাসান মাহমুদ পারভেজ প্রমুখ।