মানিকগঞ্জে সর্বাধিক মরিচ চাষ হয় হরিরামপুর, শিবালয় ও ঘিওর উপজেলায়। বিগত সময়ে এ অঞ্চলের মরিচ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে গোটা দেশ তথা বহির্বিশ্বে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু এ বছর মরিচের ফলন বিপর্যয়ে রপ্তানি তো দুরের কথা, খোদ মরিচ চাষিদেরই কিনে খেতে হচ্ছে মরিচ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে ৩ হাজার ৫শ ৫১ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে তিনশো হেক্টর বেশি। প্রতিবছর এখানকার উৎপাদিত মরিচ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো। গত বছর মানিকগঞ্জ থেকে প্রায় শতকোটি টাকার মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। কিন্তু এবছর পাতা কুঁকড়ানো রোগ, প্রচণ্ড তাপদাহ ও যথাসময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে মরিচের ফলন কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এমতাবস্থায়, মরিচ ক্ষেতে সেচের কোনও বিকল্প নেই। হরিরামপুর উপজেলার গালা এলাকার কৃষক ফরিদ মিয়া জানান, গত বছর তিন বিঘা জমিতে তিনি মরিচের আবাদ করেছিলেন। দাম ও ফলন ভাল পাওয়ায় অধিক লাভের আশায় এবছর ৫ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন তিনি। মরিচের চারা ক্রয়, সার, কীটনাশক, সেচসহ ৫ বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় লাখ টাকা। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন তার জমি থেকে ৫ থেকে ৭ মণ মরিচ তোলার কথা ছিল। কিন্তু এবার ফলন বিপর্যয়ের কারণে জমি থেকে কোনও মরিচই তোলা যাচ্ছেনা। গাছের পাতা মুড়িয়ে যাচ্ছে, ফুলও আসছে না। পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও সেচ দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। শিবালয় ও ঘিওর উপজেলার কলাগাড়িয়া, বনগ্রাম, বরংগাইল, সাহিলী, ধূলন্ডী, চৌবাড়িয়া, বাস্টিয়া ও পুখুরিয়া এলাকার কৃষকরা জানান, গত বছর মরিচের ভাল দাম ও বাম্পার ফলন হওয়ার কারণে এবছর গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ও সিডা থেকে টাকা ঋণ নিয়ে মরিচের আবাদ করেছি। কিন্তু পাতা কুঁকড়ানো রোগে আমাদের ক্ষেতে মরিচের কোন ফলন নেই। এই ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো সে চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না। জেলার প্রসিদ্ধ দুটি মরিচের বড় আড়ত হরিরামপুরের ঝিটকা হাট এবং শিবালয়ের বরংগাইল হাট। গত বছর এ দুটি আড়তে গড়ে আমদানি হতো ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক মরিচ। কিন্তু এবছর দেখা যাচ্ছে দুটি আড়তে গড়ে ৬ থেকে ৭ ট্রাক মরিচ আমদানি হচ্ছে। বরংগাইল কাঁচা বাজারের আড়তদার নাহিদ রানা জানান, এবছর আমাদের আড়তে মরিচের আমদানি গত বছরের তুলনায় চারভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। মরিচের এই ফলন বিপর্যয়ে কৃষকের মাথায় হাত আর কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো.এনায়েত উল্লাহ জানান, সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মরিচের আবাদ জুলাই পর্যন্ত থাকবে। এখনও আবহাওয়া অনুকূলে আসলে মরিচ গাছের সমস্যা দুরীভূত হয়ে পর্যাপ্ত ফল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি মরিচ ক্ষেতে পর্যাপ্ত সার ও প্রয়োজনীয় সেচের পরামর্শ দিয়েছেন।