ভোক্তা পর্যায়ে মাসে মাসে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। এবার বাড়ল আরও ৫ শতাংশ। এতে তিন মাস ধরে প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিলে যুক্ত হচ্ছে নতুন খরচ। শুধু তা–ই নয়, বাজারে চড়ে থাকা নিত্যপণ্যের দামও বাড়ছে। এখন বাড়বে আরও। সব মিলিয়ে বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে আরও হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা। মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে বলা হয়, বিদ্যুতের নতুন দাম মাস মার্চ থেকে কার্যকর হবে। তবে এবার ভোক্তা পর্যায়ে বাড়ানো হলেও পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়নি। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপনে পাইকারি পর্যায়ে গড়ে ৮ শতাংশ ও ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ সামলাতে এ বছর প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করছে সরকার। এরই ধারবাহিকতায় একমাসের ব্যবধানে গ্রাহক পর্যায়ে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। নিয়মিত মূল্য সমন্বয়ের অংশ হিসেবে এ দফায় আরও ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ইউনিট প্রতি গড়ে ৩৯ পয়সা করে বাড়ল। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হলো। নতুন বর্ধিত দাম বিল মাস মার্চ থেকে কার্যকর হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৪ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৫, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৯৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা করা হয়েছে। আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও বেড়েছে সব ধরনের বিদ্যুতের দাম। এরমধ্যে কৃষি, ধর্মীয়, দাতব্য, হাসপাতাল, রাস্তার বাতি, পানির পাম্প, ক্ষুদ্র শিল্প, শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ এর এই টানা মূল্য বৃদ্ধিতে বেকায়দায় জনগন। বোরো মৌসুম সেচ নির্ভর, বিদ্যুৎ ও ডিজেলই কৃষকের সেচের প্রান। এ অব্যাহত মূল্য ভিত্তিতে বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ কৃষক। সেচের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় উৎপাদন খরচ দ্বিগুনেরও বেশি হয়ে যাবে। লোকসান গুনতে হবে প্রতিটি কৃষককে। বিদ্যুৎ এর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৃষক তহমিদার রহমান, সাইদুল ইসলাম, নিমাই চন্দ্র জানালেন, ‘বোরোধান সেচ ছাড়া উৎপাদন অসম্ভব। তিনদিন জমিতে পানি না দিলে খেত শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। ধানের গাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। সেচে যে খরচ বেড়েছে নিয়মিত সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভেবে পাই না,নিজের পেটে খাবার দিব নাকি জমির খাবার পানি দিব?’ প্রশ্ন রাখেন তারা। রংপুর ধাপ নিবাসী জহিরুল হক বলেন, বিদ্যুৎ হলো ট্রিগার পয়েন্ট, যার প্রভাবে সকল পন্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। আবারও নিত্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটবে। অব্যাহত এ মূল্য বৃদ্ধি সল্প আয়ের মানুষের জীবনধারণের উপর শোচনীয় প্রভাব ফেলবে। ডিজেল-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে আয়ের ওপর একটা বিরাপ প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘ এতে খাদ্য সংকট হবে না। তবে আমি অবশ্যই বলবো, কৃষকের লাভ কম হবে; ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার আয়ের ওপর একটা বিরাট প্রভাব পড়বে। আমরা আধুনিক কৃষির কথা বলছি; বাণিজ্যিক কৃষি। উপকরণের দাম যদি বাড়ে বাণিজ্যিক কৃষি কীভাবে হবে? এই যে সারের এত দাম আন্তর্জাতিক বাজারে। তারপরও আমরা বিরাট পরিমাণ ভর্তুকি দেই। সেই ভর্তুকি কিন্তু আমরা কমাইনি! ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং কোভিডের অভিঘাত; আমরা ১ টাকাও সারের দাম বাড়াইনি,’ কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটা পৃথিবীতে আনইউজুয়াল; একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, যাই হোক-আমাদের যত ক্ষতিই হোক অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে আমি কোনোক্রমে এমন কিছু করবো না যা কৃষি উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলে—বিরূপ প্রভাবে ফেলে। উনি এখনো দৃঢ় হয়ে আছেন। এটা থেকে উনি সরছেন না। অর্থ এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়, নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে অনেক পরামর্শ আছে যে, কিছু কিছু সারের ওপর ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার। উনি কিছুতেই সেটা করবেন না। উনি মানব দরদি। শতকরা ৬০-৭০ ভাগ মানুষ এখনো কৃষির সঙ্গে জড়িত। কৃষি এবং কৃষকের প্রতি উনার যে দরদের কথা বলি সেটির প্রতিফলন ঘটে।’