বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নামে ‘সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল’ এর শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে এর শুভ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারাহ ইসলামের স্নেহময়ী মা শবনম সুলতানা। এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রেন ডেথ রোগী হিসেবে দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক সারাহ ইসলামের অঙ্গ অন্য চার জন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলের আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মহতী এই আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ- উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলালসহ প্রমুখ ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন এবং তাদের অঙ্গীকারনামা ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেওয়া হয়। এছাড়া বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানসহ অনেকেই মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি বলেন, সারা ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। সারা ইসলামের পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদও ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছেন। ভবিষ্যতেও আমি নিজেও এধরণের মহতী কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে পারি সেটা আমার বিবেচনায় রয়েছে। বিএনপি ঘোষিত পদযাত্রা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাননীয় মন্ত্রী বলেন, বিএনপি পদযাত্রার নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য বিএনপি দিনের বেলা পদযাত্রা করে রাতে কূটনীতিকদের পদলেহনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের এই আশা পূরণ হবে না। বিএনপির উচিত বিশৃঙ্খলা ষড়যন্ত্র পরিহার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে মোট আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদ্যন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোয় অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষা করার কাজ প্রচলিত আছে। মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সারাহ ইসলামই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনে আশা জাগিয়ে গেলেন। সারাহ ইসলামের দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এই কাজ করতে পারেন! সারাহ তা দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করা যায়। মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যুর পরও কীভাবে অন্য মানুষের উপকার করা যায়। আমার কাছে সারাহ ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। নশ্বর দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপর এক প্রাণের নাম হলো সারাহ ইসলাম। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এই নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে। মানবতার জগতে আপনি আমাদের কাছে এক অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন। উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সারাহ ইসলাম ব্রেন ডেথ হওয়ার পরপরই তাঁর দুই কিডনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্লান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে তার দুটি কিডনি বের করেন আনেন। একটি কিডনি অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলভার প্রতিস্থাপন করেন। সারা ইসলামের অপর কিডনিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।