বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিলো নেশা;
কারা যে ডাকিলো পিছে,
বসন্ত এসে গেছে…
ফাগুন আসতে আর বেশি দেরি নেই। টকটকে লাল শিমুল ফুলে ভরা গাছে সে পদধ্বনি। পাখিরাও যেন শুনেছে সে ধ্বনি। তাই শিমুল ফুলে বেড়েছে তাদের আনাগোনা। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা এবাবেই মুগ্ধ শিমুলগাছের সৌন্দর্যে। যুগে যুগে শিমুল নিয়ে এমন গান, গল্প কিংবা কবিতা লিখেছেন বলতে গেলে সব সাহিত্যিকই। বাংলাদেশের প্রায় সব অংশেই শিমুল ফুলের দেখা মেলে। গাছভর্তি লাল টকটকে ফুলের কোনো সৌরভ না থাকলেও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন না, এমন ব্যক্তি বোধ হয় খুব কমই মেলে। জলঢাকা টেঙ্গনমারী সড়কের হাফিজিয়া বাজার সংলগ্ন বিকেলে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে শিমূল ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন শিক্ষিকা শাহিনা সুলতানা ও তার সন্তান। তিনি জানালেন, মেয়ে মানহার আবদারে এভাবে গাড়ি থামিয়ে নামতে হয়, মেয়েটা শিমুল ফুল খুবই পছন্দ করে। পড়ে থাকা শিমুল কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে যায়। আমি এতে সম্মতি দেই, যাতে সে প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে পারে, প্রকৃতির সাথে ও এর সৌন্দর্যের সাথে ওর হৃদয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। মানহার সঙ্গে এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে বুলবুলি, শালিক, টিয়া। শিমুল ফুলের রঙ-রুপ মানুষের মনকে উদার করে, প্রকৃতিও তার রুপ গুণে মুগ্ধ হয়। এক সময় শিমুল ফুলের মাঝে বুলবুলি পাখিকে সহজে দেখা গেলেও এখন আর সহজে চোখে পড়ে না। শিমুল ফুলে বুলবুলির আনাগোনা দেখলে মনে হয় প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। শিমুল ফুল প্রকৃতি আর বুলবুলি পাখি বসন্তের নির্মলতার এক অনবদ্য রুপ। গাছগুলোতে বিভিন্ন পাখপাখালি আর মৌমাছিদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত । তবে এ অপরূপ সাজ সজ্জিত শিমুল গাছ ও ফুল প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফাল্গুনের শুরুতে গাছে সীমিত আকারে ফুল ফোটে। ফাগুনের আগুন মানেই যেন শিমুল ফুল। ডালে ডালে লাল আগুন ছড়িয়েই জানান দেয় বসন্তের আগমন। নিঃসঙ্গ পথের পাশে শিমুলের গাছ যেন অনন্য সৌন্দর্য। যুগে যুগে শিমুল ফুল নিয়ে গান, গল্প, কবিতা লিখেছেন অনেক সাহিত্যিক। বাংলাদেশে এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে শিমুল ফুলের দেখা মেলে না। শিমুল গাছে নজর দিলেই মনে হবে লাল গালিচা বিছানো। ওই দৃশ্য চোখে পড়লে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। তবে স্থানীয়রা জানান, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শিমুল গাছ থেকে প্রাপ্ত তুলা দিয়ে লেপ-তোষক ও বালিশ বানানো হয়। এগুলো ব্যবহার যেমন আরামদায়ক তেমন স্বাস্থ্যসম্মত। শিমুল গাছ সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোনো কার্যক্রম নেই। জনসচেতনতার অভাবে ক্রমেই হারিয়েই যাচ্ছে শিমুল গাছ। বগুলাগাড়ী চৌধুরীপাড়ার বিশিষ্টজন মাসুম চৌধুরী বলেন, একটা সময় ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারী আসলে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য শিশু-কিশোরদের ফুলের সংকট দেখা যেতো। ফুল না পেয়ে শৈশবে অনেকেই লাল টকটকে শিমুল ফুল দিয়ে ফুলের তোড়া বানিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতো। আজকাল শিশুরা শিমুল গাছ ও ফুলও চেনে না। শিমুল গাছ বিলুপ্তির কারণে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত তুলা থেকে। তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন নির্বিচারে শিমুলগাছ নিধন ও চারা রোপণ না করার কারণে এ অঞ্চল থেকে শিমুল গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারি নজরদারি বাড়ানো দরকার। শিমুল ফুলের কাছে শিশির আনতে গেছে সমস্ত সকাল, মোহময় আবহে সেজেছে প্রকৃতি। উত্তরের এ জনপদে স্বাগতম সবাইকে।