প্রায় বছর খানেক মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহা সড়কের প্রায় হাজার খানেক শতবর্ষি গাছ কেটে রাস্তা প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয় মেহেরপুর সড়ক বিভাগ। যা এখনো চলমান। হাজার খানেক গাছ কাটা হলেও নতুন করে লাগানো হয়নি একটিও গাছ। রাস্তার দুপাশ এখন ধু ধু মরুভূমি। গাছ কাটা নিয়ে পরিবেশবাদিরা ও সাধারন মানুষ ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল সেসময়। শতবর্ষি কড়ই, মেহগনি, শিমুল ও নিম গাছ গুলো কাটার কারনেই চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে দেশের সর্বচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের মেহেরপুর-মুজিবনগর ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহা সড়কের পাশে আরও ১ হাজার ৪৪০ টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে মেহেরপুর সড়ক বিভাগ। ইতিমধ্যে মেহেরপুর জেলা পরিষদ বরাবর একটি চিঠি দিয়ে গাছ গুলো কাটার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সড়ক বিভাগ। মেহেরপুর সড়ক বিভাগ থেকে জানাগেছে, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আমঝুপি পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা তৈরির কাজ করা হবে। যাতে প্রধান বাধা হয়ে আছে রাস্তার পাশে ৯৭৬টি ছোট বড় বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ। এছাড়াও মুজিবনগর সড়কে দূর্ঘটনা এড়ানোর অযুহাতে কাটা হবে আরও ৪৬৪ টি গাছ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতবর্ষি কড়ই, মেহগনি, শিমুল ও নিম গাছ গুলোকে সড়ক বিভাগ লাল রং করে নাম্বারিং করে গেছে। কিছু গাছ রয়েছে সড়কের কিছুটা উপরে, আবার বেশির ভাগ গাছ রয়েছে সড়কের বাইরে। তবে প্রায় সবগুলো গাছেই নাম্বারিং করা হয়েছে। এসব গাছ গুলো কেটে ফেলার উদ্যোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে মেহেরপুরের সাধারণ মানুষ। তাদের মতে যদি ফের দেড় হাজার শতবর্ষি পুরানো গাছ গুলো কাটা হয় তবে মেহেরপুর আর বসবাসের উপযোগী থাকবেনা। প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে। মুজিবনগর উপজেলার সদ্য বিএসএস সুপারিশ প্রাপ্ত (শিক্ষা) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে দিনের বেলায় চলাচল করার কায়দা নেই। অথচ বছর খানেক আগেও সেটি ছিল সবুজে ঘেরা একটি রাস্তা। আবারও মুজিবনগর ও চুয়াডাঙ্গা সড়কের প্রায় দেড় হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদি সত্যিই কাটা হয়, তবে তা হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতি। সাব্বির , রাশেদ, সোহেলসহ বেশ কয়েকজন পথচারি বলেন, মেহেরপুরে এবার সর্বচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩.৭ ডিগ্রি। শত শত বছর ধরে যে গাছ গুলো আমাদের প্রাকতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করছে সেই গাছ গুলো যদি কাটা হয়, আগামী বছর হয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে আর মেহেরপুরে বসবাস করতে পারবো না। গাছ কাটার উদ্যোগে ক্ষোভ জানিয়েছে পরিবেশবাদিরাও। মেহেরপুরের পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কর্মি মাসুদ রেজা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পুরো বিশ্ব কাজ করছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার গাছ রোপনের তাগাদা দিচ্ছেন। তারপরও গাছ গুলো কাটার উদ্যোগ নেয়াটা অত্যন্ত দুখঃজনক। সড়ক সংস্কার বা প্রশস্তের অযুহাতে শতবর্ষি এই গাছগুলো কাটলে যে ক্ষতির মুখে পড়বে আমাদের মেহেরপুর, তা কিভাবে কাটিয়ে উঠবে। রাস্তার পাশে অনেক জায়গা আছে প্রয়োজনে গাছ গুলোকে বাচিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করার পরিকল্পনা করা হোক। গাছ গুলো কেন কাটা হচ্ছে জানতে চাইলে মেহেরপুর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গাছ গুলো রাস্তার উপরে চলে এসেছে। যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া গাছ গুলোর কারনে সড়ক সংস্কার বা প্রশস্ত করা যাচ্ছে না। সেজন্য আমরা জেলা পরিষদকে চিঠির মাধ্যমে তালিকাসহ জানিয়েছি। এবং কাটার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, আমরা একটি তালিকাসহ চিঠি পেয়েছি। আমাদের সার্বেয়ার (পর্যবেক্ষক) যাবে। তারা যেগুলো কাটা প্রয়োজন বলে মনে করবে সেগুলোই কাটা হবে।