গতবারের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার আগাম আলু আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে শুরুতে দাম ভালো পেলেও এখন গ্রানোলা জাতের আলুর মণ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। অর্থাৎ পাইকারিতে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে সর্বোচ্চ সাত টাকা।
আলু নিয়ে কৃষকের সংকট যেন কাটছেই না। দাম বাড়ার আশায় জমিতেই ফেলে রাখা হয়েছে লাখ লাখ মণ আলু।
কৃষি বিভাগ বলেছে, ফেব্রুয়ারির শুরুতেও ক্ষেতে রয়ে গেছে অনেক আলু। এ অবস্থায় ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় গাছে মড়ক লেগে আলুতে পচনের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে লাভের আশায় আলু ক্ষেতে ফেলে রেখে ঝুঁকি নিচ্ছেন চাষিরা।
উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন আলুর হাট ঘুরে এবং ক্ষেত দেখে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষকগন বলছেন, নতুন আলুর এ দরে খরচও উঠছে না। এই মুহূর্তে বিক্রি করলে বিরাট ক্ষতি হবে।
নীলফামারীর জলঢাকা হাটে আলু বিক্রি করতে আসা কৃষক তসলিম মামুদ বলেন, ‘তিনদিনের ব্যবধানে মণে ৫০০-৬০০ টাকা কমেছে। হাটে প্রকারভেদে লাল আলু (রোমানা-পাকড়ি) ৭০০-৭২০, সাদা গ্র্যানুলা ৪০০-৪২০, কার্ডিনাল ৬০০-৬২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ আলুর ‘বাম্পার ফলন’ দাবি করলেও কৃষকদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছেই, পর পর তিনবছরের লোকসানে কৃষক দিশেহারা। ফলস্বরূপ দাম ভালো না পাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।া আলুর বদলে গম, ভুট্টা, সরিষাসহ বিকল্প ফসলে ঝুঁকছেন অনেকে।
কৃষকরা বলছেন, ভুট্টা, গম, সরিষার মতো দানাদার শস্যের দাম অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। আলুর চেয়ে তুলনামূলক কম পরিশ্রম ও খরচ হওয়ায় মুনাফার আশায় চাষিরা এসব ফসলে ঝুঁকছেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা পাইকারী হাটের আলুর পাইকারি ক্রেতা রাজু আহমেদ ও মিলন হোসেন বলেন, ‘আলুর বাজার একদিন আগে যা ছিল পরের দিন তা থাকছে না। দাম হু হু করে কমে যাচ্ছে। আমরা যেসব আলু কিনছি তা ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচাবাজারের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। কিন্তু আলুর বাজার একেবারেই উঠছে না।’
জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রামের আলু চাষি ইমাম হোসেন বলেন, ‘জমি থেকে আলু তুলে হাটে নিয়ে বিক্রি করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। যানবাহন খরচ, হাটের খাজনা দিয়ে এক মণ আলু বিক্রি করে ২৬০ টাকা হাতে পাই। তাই দাম কম-বেশি যেটাই হোক বাধ্য হয়ে জমি থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছি। ২৮০ টাকা দরে ৫২ মণ গ্রানোলা আলু বিক্রি করেছি।’
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলুর ভরা মৌসুম চলছে। এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আলুর বাজার অস্থিতিশীল, কখনো কমে কখনো বাড়ে। এজন্য আলুচাষে কৃষকের ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যান্য দানাদার শস্যের কদর বেড়ে যাওয়ায় সেদিকে ঝুঁকছেন তারা।’