স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা তিমির নন্দীকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসির পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে এক বিশাল সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
বুধবার বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসির কাঙ্গাল হরিনাথ মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তিমির নন্দী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কাঙাল হরিনাথ পদক প্রদান করা হয়।
এ সময় তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও কাঙ্গাল হরিনাথ পদক পেয়ে আমি গর্বিত।স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্রের একজন শিল্পী হিসেবে পরিচয় লাভ করা, এটি আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাতা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতার গান, মুক্তির গান গেয়েছি। নোঙর তোলো তোলো গান দিয়ে শুরু আর বিজয় নিশান গানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যাত্রার পরিসমাপ্তি হয়। মায়ের কথায় আমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিয়েছিলাম।
শিল্পী তিমির নন্দী বলেন, পচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থান হয়। জাতি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষে বিভাজিত হয়। আমি রাশিয়া থেকে ১৯৮৩ সালে দেশে ফিরি। সে সময় এদেশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিষিদ্ধ ছিলো। আমি সে সময় চারুকলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয় গান গেয়েছিলাম। অনেকে আমাকে হুমকি দিয়েছিলো। আমি বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে কোন আপোস নেই।
সর্বশেষ তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়ায় রাজু ভাই নেই, মান্না ভাই নেই, জব্বার ভাই নেই, কল্যান দা নেই। এখন শুধু আমি বেঁচে আছি। বর্তমান সরকারের কাছে আমার একটিই দাবী, কুষ্টিয়ায় বেতার কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে এই জেলার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করুন। সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়ায় একটি বেতার কেন্দ্র হওয়া সময়ের দাবী, কুষ্টিয়া জেলায় বেতার কেন্দ্র হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
সর্বশেষ তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিজয় নিশান গান, রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশ গানের দুই-কলি গেয়ে সাংবাদিকদের মনোমুগ্ধকরে বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসি ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি বাংলাদেশ বেতার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা তিমির নন্দী আমাদের মাঝে এসে সংবর্ধনা গ্রহণ করে কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের সাংবাদিকদের ধন্য করেছেন, আজ তাকে আমরা পেয়ে ধন্য হয়েছি। তিমির নন্দী তার বক্তব্যে কুষ্টিয়ায় বেতার কেন্দ্র চেয়ে যেই দাবি জানিয়েছেন আমি মনে করি কাঙ্গাল হরিনাথ, মীর মশাররফ, রবীন্দ্রনাথ, লালনের সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়ার এই একটি অভাব পূরণের লক্ষ্যে কুষ্টিয়ায় বেতার কেন্দ্র চাওয়া যুক্তিপূর্ন একটি দাবি। কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের গণমাধ্যমকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি কুষ্টিয়া জেলায় বেতার কেন্দ্র স্থাপন হোক।
এদিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি’র সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবের সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী তিমির নন্দীকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি আফরোজা আক্তার ডিউ, কুষ্টিয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি খোকন সিরাজুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞানী গৌতম কুমার রায়, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি’র সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মৃধা পলাশ প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসির প্রচার সম্পাদক সালমান শাহরিয়ার রাজু, দপ্তর সম্পাদক এসএম ওয়ালিদুজ্জামান শুভ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জাহিদুল হক ডন, নির্বাহী সদস্য হাফিজুর রহমান জীবন, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ কায়সার,সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব হাসান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক চাঁদ আলী, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর খান, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসির সদস্য এইচ.এম.সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ,এইচ.এম.বেলাল, সুমন মাহমুদ, বিদ্যুৎ, তামিম সহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।