টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে রোপা আমন, গাছপালা ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা রোপা আমন বৃষ্টির পানিতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। একইভাবে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সঞ্চালন লাইনের খুঁটি ভেঙে ও খুঁটির তার ছিঁড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রায় দেড় লাখ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক চরম বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কবে নাগাত লাইন পুরোপুরি চালু হবে তার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, লাইন মেরামতের কাজ চলছে ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চালু করার জন্য তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। লাইন চালু হতে সময় লাগবে বলে তারা উল্লেখ করেন। বুধবার মির্জাপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ জানা গেছে, সিত্রাংয়ের তাণ্ডব ও ঝড় বৃষ্টিতে রোপা আমন ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কাঁচা ধানগাছ পানি ও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। একইভাবে ক্ষতি হয়েছে গাছপালা ও সবজি আবাদের। বংশাই ও লৌহজং নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করেই নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্চয় পাল জানিয়েছেন, রোপা আমন ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু হয়নি। বাঁশতৈল ইউনিয়নের ফরিদা ইয়াসমিন (৪৮) ও ফারুক হোসেন (৫৬), পৌরসভার মোকলেছ মিয়া (৬০) এবং ফতেপুর ইউনিয়নের কলেজ ছাত্র মাসুদ করিম (২২) অভিযোগ করেন, সিত্রাংয়ের কারণে সোমবার (২৪ অক্টোবর) গভীর রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও সঙ্গে হালকা বাতাস শুরু হয় হয়। সকাল সাতটার পর থেকে শুরু হয় প্রচুর বৃষ্টি এবং ঝড়। বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে এলাকায় বিভিন্ন ফসল ও গাছপালার ক্ষতি হয়। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগে নেমে আসে বিপর্যয়। অধিকাংশ এলাকা পুরোপুরি অন্ধকার হয়েছে। মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, বাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজাগানা, তরফপুর এবং বাঁশতৈল ইউনিয়নে বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রায় দেড় লাখ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক চরম বিপাকে পরেছেন বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। বিদ্যুতের অভাবে বিভিন্ন বাসাবাড়ির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা এবং অফিস আদালতেও কাজকর্ম মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। দেওহাটা ও ধেরুয়া এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধিনে ৩৩ কেবি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ১২-১৩ টি খুঁটি ভেঙে রাস্তার দক্ষিণ পাশে পড়ে আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুঁটি ও লাইন মেরামত করতে দেখা গেছে। টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মির্জাপুর ও গোড়াই জোনাল অফিসের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জাকির হোসেন ও মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবের কারণে মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি ভেঙে পরে ও খুঁটির তার ছিঁড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ রয়েছে। তারা আরও বলেন, মির্জাপুর একটি বৃহৎ এলাকা ও শিল্পাঞ্চল রয়েছে। গ্রাহক রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। বিদ্যুৎ বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও লাইন ম্যানগণ দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিদ্যুতের লাইন সচল করার জন্য। লাইন পুরোপুরি সচল হতে সময় লাগবে বলে এই দুই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
নবচেতনা/আতিক