সিলেট বিভাগে মানব পাচারকারী বিশাল সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে দালাল চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে কেউ নিখোঁজ হচ্ছেন, কেউবা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ছেলে-ভাইয়ের নিখোঁজের কথা সামাজিক লাজলজ্জার কারণে অভিভাবকরা কারো কাছে বলতেও পারছেন না, সইতেও পারছেন না।
সম্প্রতি দালালের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার পথে জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের একওয়ান ইসলামের করুণ মৃত্যুর ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে একাটি শক্তিশালী মানব পাচারকারী চক্র বেশ সক্রিয় ছিল। তখন পুলিশ সিলেটে ১৩ চক্রের সন্ধান পায়। এ অবস্থায় মানব পাচারকারী চক্রের তালিকা তৈরি করতে নেমেছে পুলিশ।
একওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা হয়। পুলিশ মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা কারাগারে রয়েছে।
সুনামগঞ্জে মানবপাচারকারী চক্রে কারা রয়েছে পুলিশ তথ্যসংগ্রহ করছে বলে জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, একওয়ানের ঘটনায় মানব পাচার আইনে শ্রীধরপাশা গ্রামের চার জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়। পুলিশ ৯ অক্টোবর আসামি আবুল মিয়া ও তার স্ত্রী আছমা বেগমকে গ্রেফতার করেছে। এসময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ এবং ব্যাগের ভেতর রাখা ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা, সাতটি মোবাইল ফোন, একটি এটিএম কার্ড, দুটি ব্যাংক চেকসহ একটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। মামলার অপর দুই আসামি আলী হোসেন ও তার আত্মীয় সালেহ আহমদ লিবিয়ায় অবস্থান করছেন।
তিনি আরো জানান, দালালদের খপ্পরে পড়ে মানুষ প্রলুব্ধ হয়ে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার জন্য টাকা দিচ্ছেন। লিবিয়া হয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে কেউ মারা যাচ্ছেন। কেউ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দালাল চক্রের কারণে একওয়ানের পরিবারের মতো অনেকে পরিবার সর্বস্ব হারাচ্ছে। সুনামগঞ্জে যেসব মানব পাচারকারী রয়েছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা তৈরির পর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত বছরের মার্চে জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের দালাল আলী হোসেনের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি যেতে লিবিয়া যান কৃষক তরিকুল ইসলামের ছেলে একওয়ান। সেখানে পৌঁছার পর দালাল চক্র তাকে আটক করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। তাকে সেখান থেকে রক্ষা করতে চুক্তির টাকা দফা দফায় প্রদান করে একওয়ানের পরিবার। চুক্তিমতে টাকা দিলেও ইতালি না পাঠালে লিবিয়া থেকে ছেলে দেশে ফেরত নিয়ে আসার জন্য দালালকে চাপ দেন একওয়ানের বাবা। কিন্তু তাকে দেশে ফেরত পাঠায়নি।
চলতি বছরের জুন মাসে দালাল আলী হোসেন ও লিবিয়ায় অবস্থিত তার সহযোগী সালেহ আহমদ, যুবক একওয়ানকে এক মাফিয়া দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। দিনের পর দিন খাবার না দিয়ে অমানবিকভাবে তাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা তদবিরের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় একওয়ানের লাশ দেশে আসে।