শুক্রবার দিনগত মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়েছে জ্বালানির তেলের নতুন মূল্য। সেই মূল্য তালিকায় ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। আর এতে করে ‘ভাড়া সমন্বয়’ ছাড়া বাস চালানো সম্ভব না বলে জানিয়েছেন মালিকরা।
শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে বেশ রাজধানীর কয়েকজন বাস মালিক এবং পরিবহন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেল বৃদ্ধির খবরে গতকাল ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো রাত থেকে ভোরের মধ্যেই ঢাকায় ফিরে এসেছে। তবে নতুন করে কোনো বাস রাজধানী ছেড়ে যায়নি। ভাড়া সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত আগের ভাড়ায় বর্তমান দামের তেল নিয়ে বাস চালানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
এদিকে পরিবহন নেতারা বলছেন, শুধু তেলের দাম নয়, সম্প্রতি যানবাহনের স্পেয়ার পার্টসের দাম বেড়েছে অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। যার ফলে শুধু তেলের দাম নয়, এই সব কিছু মিলিয়ে সমন্বয় করে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। না হলে কোনো বাস মালিকরা বাস চালাতে পারবে না।
ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম রুটে চলাচলকারী হাজী ট্রাভেলসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালিক বলেন, সাধারণ মালিক হিসেবে এ মুহূর্তে আমাদের ব্যবসা করার কোনো এবিলিটি নাই। গতকাল তেলের দাম বাড়লো, এর আগে ইঞ্জিন অয়েলের দাম বেড়েছে, টায়ারের দাম বেড়েছে, অন্যান্য পার্টসের দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে, আমাদের ব্যবসা করার কোনো সুযোগই নেই।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে পাটগ্রাম আপডাউনে ২২০ লিটার ডিজেল দরকার হয়। গতকাল ৮০ টাকা দরে ১৭ হাজার ৬০০ টাকায় তেল নিয়েছি। আর আজ কিনতে গেলে লাগবে ২৫ হাজার ৮০ টাকা। এক রাতের মধ্যেই তেলের দাম বেড়ে গেছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। তাহলে কীভাবে ব্যবসা করব আমরা।
ঢাকা জামালপুর রুটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস মালিক বলেন, ঢাকা-জামালপুর আসা-যাওয়া মিলিয়ে ১১০ লিটার ডিজেল লাগে। যার মূল্য ৮ হাজার ৮০০ টাকা। এখন ওই রোডে বাস চালাতে সাড়ে ১২ হাজার টাকার তেল লাগবে। এছাড়া অন্যান্য খরচ তো আছেই। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি বিকেলের মালিক সমিতির বৈঠকের জন্য। তারা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য একটা ভালো ফল নিয়ে আসবেন। না হলে বাস ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।
মহাখালী বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, তেলের দাম প্রতি লিটার বেড়েছে ৩৪ টাকা। তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক জিনিসেরও দাম বেড়েছে। বর্তমানে একজোড়া টায়ারে ২০ হাজার টাকা বেড়েছে। ২০ শতাংশ স্পেয়ার পার্টসের দাম বেড়েছে। এই মুহূর্তে তেলের দাম সমন্বয় করে আমাদের ভাড়া নির্ধারণ করলে হবে না। স্পেয়ার পার্টসের দামও এর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আমরা তো বাস মালিকের কথা বলি। কিন্তু যে মালিকের একটি বাস আছে, তার যদি বাসটি একদিন বন্ধ থাকে তবে তার বাসায় খাওয়া-দাওয়া অনেক সময় বন্ধ থাকে। ঢাকা শহরের অধিকাংশ মালিকেরই একই অবস্থা। সবদিক বিবেচনা করে সরকার একটা সমন্বয় করে দিলে আমরা খুশি। আমরা শুধু সমন্বয়টা চাচ্ছি, কোনো পারসেন্টেজ চাচ্ছি না। আমাদের বেশি বেনিফিটের প্রয়োজন নেই, শুধু সমন্বয় দরকার যেন আমরা রোডে বাস চালাতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা সমন্বয়ের জন্য একটি বোর্ড গঠন করেছেন। তারা এটার হিসাব-নিকাশ করছে। এটা নিয়েই আমাদের বিআরটিএ’র সঙ্গে বিকেলে মিটিং হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমাদের সমন্বয় কমিটি আছে, তারা বিষয়টা দেখছেন। তারা যেটা নির্ধারণ করবে, সেটা নিয়েই আলোচনা হবে। আপাতত আর কিছু বলতে পারছি না।