আদিকাল থেকেই মাদারীপুরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল খেজুরের গুড়। তবে এ ঐতিহ্য এখন অনেকটাই হারিয়ে যাওয়ার পথে। ‘খেজুর রস-খেজুর গুড় দক্ষিণের দ্বার মাদারীপুর’। মাদারীপুর জেলা প্রশাসন এ স্লোগানকে ব্রান্ডিং করেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড়ের কারনে। সেই খেজুর গুড়ের বাজার জমে উঠেছে মাদারীপুর শহর, গ্রাম তথা বড় বড় হাট বাজারে। ঐতিহ্যের কদর করেই এখনো তৈরী গুড়। বাণিজ্যিকভাবে অঞ্চল ভিত্তিক খেজুরের রস ও গুড়ের রপ্তানী না হলেও চাহিদা রয়েছে এখনো। এ অঞ্চলের পাটালি গুড় ভাঙলে কাচা রসের গন্ধ এবং লাল-খয়েরী স্ফটিকের মতো রঙ আর অতুলনীয় স্বাদ পাওয়া যায়। তবে আগের মত রস না থাকায় চড়া দামেই বিক্রি হয় রস ও গুড়। খাটি গুড় পেতে দামের দিকে নজর দেয় না অনেক ক্রেতারা। তবে মাদারীপুুরের এই খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায় এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। সে উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে হয়তো ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এখানকার রস ও গুড় শুধুই যে স্থানীয় চাহিদা মেটায় তা কিন্তু না। এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব যারা অন্যজেলায় বসবাস করে তাদের কে পাঠানো হয় গুড়। মৌসুমের সময় স্বজনদের নিকট গুড় পাঠানো, মেয়ে জামাই-আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে বিভিন্ন পিঠা-পায়েস তৈরী করে খাওয়ানোর ধুম পড়ে এ অঞ্চলে। বছরের বাকি সময় এখানে আপনজনেরা বেড়াতে না আসলেও শীতের মৌসুমে খেজুর রস ও গুড়ের স্বাদ গ্রহন করতে ছুটে আসে মাদারীপুরে। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাদারীপুুরের প্রায় সব উপজেলায়ই গুড় কম-বেশি পাওয়া যায়, তবে খোয়াজপুর, মস্তফাপুর, কালিকাপুর, কুনিয়া, আমগ্রাম, বাজিতপুর, বদরপাশা, কবিরাজপুর, লক্ষীপুর, রমজানপুর, সাহেবরামপুর, উমেদপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গুড় পাওয়া যায়। মাদারীপুর শহরের পুরান কোর্ট এলাকায় গুড়ের বাজার বেশ জমে উঠে প্রতিবছরই। আশ পাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে গুড় কিনতে আসে ক্রেতারা। অনেক সময় চলতি পথে গাড়ি থামিয়ে গুড় নিতে দেখা যায় অন্য জেলা লোকদের। প্রতিদিন বিকেলে গাছ কাটায় (রস বের করার পদ্ধতি) ব্যস্ত থাকে শেয়ালিরা (গাছি)। খুব ভোরে গাছি ও তার পরিবারের সদস্যরা গাছ থেকে রস নামিয়ে সেই রস জ¦ালিয়ে তৈরী করা হয় সুস্বাদু গুড়। আগুনের আঁচে ধীরে ধীরে সোনালি, কমলা অবশেষ রক্তিম লাল হয় গুড়ের রং। তখন এ তরল গুড় দিয়ে বেশ কয়েকটি নামের গুড় তৈরি করা হয়। যেমন ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, খানডা গুড়, নলের গুড়। হাট-বাজার দেখা যায়, গুড়ের দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। তবে, খাটি গুড় পাবে কিনা তা নিয়ে সংকিত থাকে বেশীর ভাগ ক্রেতারা। সংকিত থাকার একটাই কারণ গুড়ের মধ্যে পাওয়া যায় চিনি। চিনি থাকলে সে গুড় দিয়ে মন মাতানো সুস্বাদু পিঠা তৈরী হয় না। তবুও এই গুড় নিয়ে মাতামাতি ও দরদাম করতে দেখা যায় ক্রেতাদের। মৌসুমের শুরুতে তেমন গুড়ের দাম ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে কেজিতে বিক্রি হয় এই গুড়। তবে বেশি দামের যে গুড় বিক্রি হয় তার মান ও স্বাদ বেশি ভাল।