মৌসুমের শুরুতে কী একটা ঝড়ই না বয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা সমর্থকদের ওপর দিয়ে!ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি হুট করে ক্লাবের সভাপতিকে জানিয়ে দিলেন, ক্লাবে থাকতে চান না। মাঠ ও মাঠের বাইরে উন্নতি করার ইচ্ছা যে দলের নেই, ক্যারিয়ারের শেষ ভাগ সে দলে থেকে হতাশা বাড়াতে চান না। মূল আক্ষেপটা ছিল সভাপতিকে নিয়েই। সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন মেসি। পরে চুক্তির বেড়াজালে আটকে বার্সা ছাড়া না হলেও এই মৌসুমের পর বার্সার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে গেলে মেসি যে ক্লাব ছাড়বেন না, এর নিশ্চয়তা কোথায়? এদিকে ক্লাব সভাপতির পদ থেকে এর মধ্যেই বিদায় নিয়েছেন বার্তোমেউ। ফলে বার্সা সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে, মেসি হয়তো চুক্তি নবায়ন করবেন। কিন্তু যদি না করেন? মেসি যদি মৌসুম শেষে আবারও ক্লাব ছাড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যান?এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না লুইস ফিগো। হ্যাঁ, সেই ফিগো, যিনি বার্সেলোনা-আকাশের সবচেয়ে বড় তারা হওয়া সত্ত্বেও যোগ দিয়েছিলেন ‘চিরশত্রু’ রিয়াল মাদ্রিদে। ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা দল ছাড়লে কেমন লাগে, সেটা বার্সা সমর্থকেরা বুঝেছিলেন এই ফিগোর কল্যাণেই। সেই ফিগোই বলেছেন, ক্লাব ছাড়া নিয়ে যদি মেসি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকেন, তবে যত যা-ই হোক, মন বদলাবে না তাঁর, ‘মেসি ক্লাব ছাড়তে চাইছে, এমন খবর শুনে বাকি ১০ জনের মনের অবস্থা যা হয়েছিল, আমারও ঠিক তাই হয়েছিল। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি প্রথমে। সব ক্লাবই মেসির মতো একজন খেলোয়াড় চায়। কিন্তু মেসির মতো খেলোয়াড়ের ক্লাবে থাকা নির্ভর করে সেই ক্লাবের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বেতন, খেলোয়াড়ের ইচ্ছা—এসবের ওপর।’ফিগো মনে করেন মেসি মনস্থির করে থাকলে বার্সা ছাড়বেনই।ফিগো মনে করেন মেসি মনস্থির করে থাকলে বার্সা ছাড়বেনই।মেসির অমন সিদ্ধান্তের পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ ছিল, এটা বিশ্বাস করেন ফিগো, ‘ও নিশ্চয়ই অমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক কিছুই ভেবেছে। নিশ্চয়ই এমন কিছু ছিল, যার কারণে সে ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিল। আমি জানি না সেগুলি কী! কিন্তু জীবন থেকে আমি যেটা শিখেছি। সেটা হলো, কেউ যদি কোথাও থাকতে না চায় এবং সে ব্যাপারে মোটামুটি মনস্থির করে ফেলে, তাহলে কেউ তাঁকে আটকাতে পারে না।’ফিগো নিজেও হয়তো সে সময়ে বার্সায় থাকতে চাননি একদম। বার্সেলোনার হয়ে ১৭২ ম্যাচে ৩০ গোল করা লুইস ফিগোকে বড্ড ভালোবাসতেন ক্যাম্প ন্যুর দর্শকেরা। সেই ভালোবাসা হয়তো যথেষ্ট মনে হয়নি ফিগোর। ২০০০-০১ মৌসুমে বার্সার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্কটা চুকিয়েই ফেলেন তিনি। যোগ দেন অন্য কোনো ক্লাব নয়, চিরশত্রু রিয়ালে! শুধু রিয়াল-বার্সা বলেই নয়, ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ট্রান্সফার এটি। ছয় কোটি এক লাখ ডলার ট্রান্সফার ফি ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ট্রান্সফারের একটিও বটে। বার্সেলোনা সমর্থকদের কাছে সেই থেকে পর্তুগিজ তারকা চিরদিনের বিশ্বাসঘাতক। ২০০২-০৩ মৌসুমে এল ক্লাসিকো খেলতে ন্যু ক্যাম্পে ফিরলে ফিগোকে বিরূপ অভ্যর্থনা জানানো হয়। একসময়ের ভালোবাসার খেলোয়াড়কেই সমর্থকেরা ঘৃণা উগরে দিয়েছিলেন। তাঁর জন্য রীতিমতো পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। ম্যাচ চলার সময় কর্নার, ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় ফিগোর উদ্দেশ করে গ্যালারি থেকে মুদ্রা, গলফ বলদ, এমনকি শুয়োরের একটা কাটা মুণ্ডুও ছুড়ে মারা হয়েছিল! সঙ্গে উপরি হিসেবে দুয়োধ্বনি তো ছিলই। ফিগো কিন্তু রিয়ালের জার্সিতে বেশ সফল হন। ১৬৪ ম্যাচে গোল করেছেন ৩৬টি। রিয়ালের দুটি লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।