কোভিডকালেও দেশ উন্নয়নের পথে আছে। কিন্তু একই সঙ্গে অসাম্য বাড়ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে
পৃথিবীতে অনেক নেতা আসবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো আর কোনো নেতা আসবেন না। তিনি কোনো দলের নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন দেশের নেতা।বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংসদেরা এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এ নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো এ প্রস্তবের ওপর আলোচনা হলো। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই আলোচনা চলবে।’৬৬-র ছয় দফা এবং ’৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বক্তব্য দেন সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ। তিনি পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের নানা দিক তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাশ থেকে তাঁকে নানা ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু ৩৫ দিনে ৩২টি জনসভা করেছিলেন। বক্তৃতার কারণে ওই সময় আটবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই পৃথিবীতে অনেক নেতা আসবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো আর কোনো নেতা আসবেন না। তিনি ছিলেন বিশ্বের মর্যাদাশালী নেতা। তিনি মৃত্যুবরণ করেননি, তিনি আছেন, থাকবেন।ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপিত সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, ছয় দফা বঙ্গবন্ধুকে একক নেতায় পরিণত করেছিল। তিনি কেবল একটি দলের নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন দেশের নেতা, মানুষের নেতা। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি জাতির জনক।১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি শুধু কাগজে থাকবে, নাকি বাস্তবে পরিণত করা হবে, এই প্রশ্ন তুলে রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ধর্মের রাজনীতি চলতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে তিনি বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। আজ মুজিব বর্ষে এই বিষয় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। হেফাজত বলে, তাদের কথায় দেশ চালাতে হবে। এখন ব্লাসফেমি আইনের দাবি উঠছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সমাজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
মেনন বলেন, সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে হলে শোষিতের পক্ষে থাকতে হবে। এই কোভিডকালেও দেশ উন্নয়নের পথে আছে। কিন্তু একই সঙ্গে অসাম্য বাড়ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়েও ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধি হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। এই পতাকা, জাতীয় সংগীত, ভূখণ্ড যত দিন থাকবে, তত দিন বঙ্গবন্ধু স্বমহিমায় ভাস্বর থাকবেন। খুনিরা যথার্থই বুঝতে পেরেছিল, শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই সফল হওয়া যাবে না। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযদ্ধের চেতনা বাংলাদেশকে হত্যা করা। তারা বুঝেছিল, বঙ্গবন্ধুর রক্তের ছিটেফোঁটাও যদি থাকে, তাঁকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। এ কারণে শিশু রাসেলকে পর্যন্ত ক্ষমা করেনি, কাউকেই রেহাই দেয়নি। সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা ও রেহানা বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, শামসুল হক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শাজাহান খান, মির্জা আজম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আতিউর রহমান, তাহজীব আলম সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আরমা দত্ত আলোচনায় অংশ নেন।