দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপিতে গৃহদাহ এখন তুঙ্গে। এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় হামলা করতেও কুণ্ঠিত হয়নি বিদ্রোহী কর্মীরা।ঢাকা-১৮ এর উপনির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা মির্জা ফখরুলের বাসায় হামলা চালায় গত ১০ অক্টোবর। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ওই হামলার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু পরে দেখা যায়, ওই হামলার দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে নিজ দলের অনেক নেতাকর্মীকে।ওই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আবেদন করেছিলেন ৯ জন নেতা। দল মনোনয়ন দেয় যুবদলের ঢাকা মহানগর (উত্তর) কমিটির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে। যার বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই অভিযোগের পাহাড় জমা ছিল। স্থানীয় প্রায় সব নেতৃত্বই তাকে মনোনয়ন না দিতে নীতিনির্ধারকদের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু নীতিনির্ধারকরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই মনোনয়ন দেয় জাহাঙ্গীরকে। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে বঞ্চিত নেতাদের সমর্থকরা মহাসচিবের বাসার সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে মির্জা ফখরুলের বাসা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ডিম নিক্ষেপ করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মহাসচিব তখন বাসায়ই ছিলেন। ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়।এর আগে মনোনয়নবঞ্চিতদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের নজির থাকলেও মহাসচিবের বাসায় হামলার ঘটনা এটাই প্রথম। হামলার পর দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সঙ্গে সরকারের এজেন্টরা জড়িত বলে দাবি করা হয়। পরদিন ১১ অক্টোবর রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে হামলার ওই ঘটনার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন।দলীয় সূত্র মতে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঘটনাটি সরকারের এজেন্টদের কাজ বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। অবশ্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’—এমন প্রয়াস প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। এটা সব রাজনৈতিক দলই করে। কোনো কিছু নিয়ে বেকায়দা অবস্থা তৈরি হলেই প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেরা পানি থেকে ডাঙায় ওঠা হাঁসের মতো পালক ঝাড়া দিয়ে শরীর ঝরঝরের চেষ্টা করে।সরকারের এজেন্টরা মহাসচিবের বাসায় হামলা করেছে বলে বিএনপি দাবি করলেও একদিন পর তারা দলের স্থানীয় ১২ নেতাকে ওই ঘটনার দায়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে। এখন প্রশ্ন হলো, ওই ১২ জন কি আসলেই সরকারের এজেন্ট? যদি তারা সরকারের এজেন্ট-ই হবেন তাহলে এমন এজেন্ট বিএনপিতে আর কতজন আছেন?ওই ঘটনা বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি করেছে। দলের তৃণমূল কর্মীদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, দলের এই চরম দুর্যোগের মুহূর্তেও যদি নেতারা ঐক্যবদ্ধ এবং দলের স্বার্থ ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে না পারেন, তাহলে দলের ভবিষ্যৎ কী?ইতোমধ্যে বিএনপির তিন কেন্দ্রীয় নেতার সাম্প্রতিক সময়ের বক্তব্য নিয়ে তৃণমূলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম এবং ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীরউত্তমের দেয়া বক্তব্য দেশব্যাপী বিএনপির তৃণমূলসহ রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনার জন্ম দেয়।তাদের ওই বক্তব্য নিয়ে একাধিক দৈনিকে বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন, হঠাৎ কেন তিন সিনিয়র নেতা দলের শীর্ষনেতৃত্ব নিয়ে এমন খোলামেলা সমালোচনা করলেন। অতীতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও বা সিনিয়র নেতাদের মনে কোনো ক্ষোভ থাকলেও এভাবে খোলামেলা আলোচনা কখনোই হয়নি। তাহলে এখন কেন? বিষয়টি অনেকের কাছেই কুয়াশাচ্ছন্ন!তাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এরশাদ সরকারের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনের মন্তব্য ছিল খুব কঠোর ও চাঁছাছোলা। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া কীসের আপসহীন? আপস না করলে উনি জেল থেকে বের হলেন ক্যামনে? সরকারের কথা শুনেই তো বেরিয়েছেন। বেগম জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন, তার একটিই কারণ। তিনি জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী।’ এ প্রসঙ্গে তিনি (শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন) খালেদা জিয়ার লেখাপড়া জানা, না জানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি তাকে দেয়া কথা রাখেননি বলেও মন্তব্য করেন।