একসময় যেখানে ছিল ফসলের মাঠ, কৃষক ও জেলেদের বসতবাড়ি; এখন সেখানে শুধু পানি আর পানি। পাড় ভাঙে, বসতঘর ভাঙে, মেঘনার সীমানা বাড়ে। বাড়ে মানুষের কান্না।
মেঘনাপাড়ের অসহায় মানুষের চোখের পানি আর নদীর পানি আজ একাকার। জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতে। ঠেকানোর সাধ্য নেই তাদের। শুধু তারা তাকিয়ে দেখছেন। ভাঙন ঠেকানোর দায়িত্ব যাদের, তারা আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করবেন বলে প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছেন।
রোববার সরেজমিন এমন দৃশ্য দেখা গেল লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার জালিয়ারচর, কুচিয়ামারা, চরপাঙ্গাশিয়া, চরইন্দ্রু রিয়াসহ চারটি ইউনিয়নে। পানি বাড়তে শুরু করেছে মেঘনায়। আর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীর ভাঙন। অনেক পরিবার চলে গেছেন ভোলা, চরভৈরবী, হাইমচর, মেঘনারচর ও টুনুরচরসহ বিভিন্ন স্থানে।
ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন, দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন ও চরআবাবিল এবং দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও বহু ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতি বছরই বর্ষায় ভাঙন দেখা দেয়। শতাধিক বসতঘরসহ মোল্লারহাট বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বরাদ্দ না থাকায় তাদের এ মুহূর্তে তেমন কিছুই করার নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেঘনার ভাঙনে উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চরআবাবিল ও দক্ষিণ চরআবাবিল ইউপির পাঁশ শতাধিক বাড়িঘর এবং বিস্তীর্ণ ফসলি জমির পাশাপাশি ভেঙে গেছে মোল্লারহাট বাজারের পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একটি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসা। ভাঙনের মুখে পড়েছে মোল্লারহাট বাজারটি। নদীভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরী বলেন, মেঘনার ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তা ও ঢেউটিন দেয়া হয়েছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙনরোধে ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে।
রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজি, উত্তর চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান মো. হোসেন আহাম্মদ, উত্তর চরআবাবিল ইউপি চেয়ারম্যান শহীদউল্লাহ বিএসসি বলেন, ভাঙনরোধে স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতি বছরই বর্ষায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান এ জনপ্রতিনিধিরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে কিছু জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সেটি পেলে আগামী অর্থবছরে কাজ শুরু করা হবে।