সৌদি প্রবাসীদের পিছু ছাড়ছে না ভোগান্তি। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও টিকিট নিয়ে দুর্ভোগ কাটছেই না।
সৌদি এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে টিকিট নিয়ে নানা ধরনের কারসাজির অভিযোগ তুলেছেন অনেক প্রবাসী। রিটার্ন টিকিট কেটে আসেননি এমন অনেকের কাছে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
রিটার্ন টিকিটের টাকা তুলে ফেলা হয়েছে এমন প্রবাসীদের কারও কারও কাছে নতুন টিকিট বাবদ চড়া দাম হাঁকা হচ্ছে। প্রবাসীরা জানিয়েছেন, এয়ারলাইন্সটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর সঙ্গে যুক্ত। কফিলের কাছে ভিসা ইকামার মেয়াদ বাড়ানোর কথা বললে তারাও দাবি করছেন বাড়তি টাকা।
টিকিট পেয়েও সিডিউল অনুযায়ী সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমান না আসায় অনেক যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কোন প্রক্রিয়ায় ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে শঙ্কা কাটছে না অনেক প্রবাসীর।
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, সেখানে সৌদি এয়ারলাইন্স অফিসের বাইরে প্রবাসীদের ভিড়। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছিলেন ফুটপাতেও। এদিন সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে টোকেনধারী ও টোকেন ছাড়া অনেককেই টিকিট দেয়া হয়। বিশেষ করে যারা রিটার্ন টিকিট কেটে এসেছেন, তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অনেকে এদিন ফরম পূরণ করতেও এসেছিলেন। এখানে প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে নানা সমস্যার বিষয়ে জানা যায়।
প্রবাসী হাসান মিয়া তার দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে বলেন, রিটার্ন টিকিট কেটে আসার পরও এখান থেকে বলছে আমার টিকিটের টাকা নাকি কে উঠিয়ে নিয়েছে। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারাও কিছু বলতে পারছে না। এখন নাকি আবার নতুন করে টিকিট কিনতে হবে। দাম পড়বে ৯২ হাজার টাকা। অথচ আসা ও ফিরতি টিকিটের সময় মাত্র দুই হাজার রিয়েলে কাজ হয়েছিল। আমি এখন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে টিকিট কেনার ব্যবস্থা করছি। এছাড়া কোনো উপায় নেই।
মো. মোখলেছ ব্যাপারী নামে আরেক প্রবাসী রিটার্ন টিকিট না কেটেও টিকিট পেয়েছেন। তাকে শুধু রিটার্ন টিকিটের জন্য গুনতে হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। তিনি বললেন, সবকিছুরই সিস্টেম আছে। ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সৌদি এয়ারলাইন্সের অসাধু লোক মারফতেই পাওয়া যাচ্ছে এসব টিকিট। তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সৌদি এয়ারলাইন্সের কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রিটার্ন টিকিট যারা কেটে এসেছেন, তারা এদিন বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে টিকিট পেয়েছেন। এজন্য তাদেরকে বাড়তি কোনো টাকা গুনতে হয়নি।
আরেক সৌদি প্রবাসী মো. অনিক জানালেন সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানে সিডিউল বিপর্যয়ের কথা। বললেন, আমাকে ৭ অক্টোবর রাত ৩টার একটি ফ্লাইটের টিকিট দেয়া হয়। রিপোর্টিং ছিল সন্ধ্যা ৭টায়। সারা রাত অপেক্ষা করেও যে বিমানে যাওয়ার কথা ছিল, সেটি আসেনি।
এয়ারপোর্টে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে এখন সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসে এসেছি। সিডিউল ফ্লাইটটি কেন আসেনি, সে বিষয়ে কোনো তথ্য না দিয়ে ওনারা আমাকে জানালেন বিষয়টি তারা দেখছেন। এখন কখন যে আবার ফ্লাইট পাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এদিকে মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্স থেকেও বৃহস্পতিবার সৌদি প্রবাসীদের টিকিট ইস্যু করা হয়। এক্ষেত্রে এদিনও প্রাধান্য পেয়েছে ভিসার মেয়াদের বিষয়টি। যাদের ভিসার মেয়াদ তুলনামূলক কম রয়েছে, তাদেরকেই আগে টিকিট ইস্যু করা হয়েছে। এদিন সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়েই টিকিট সংগ্রহ করেছেন প্রবাসীরা।