বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই পানের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতিতে বিয়ে সাধির আনুষ্ঠানিকতাসহ প্রচলিত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে পানের রিতী রেওয়াজ অপরিহার্য একটি বিষয়। অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন নামে বিভিন্ন উপাদানে নানা ধরনের পান তৈরী করা হয়ে থাকে। নানা রকম সুগন্ধি আর বাহারি সব মশলার সংমিশ্রনে তৈরী নামীদামী সিলেটের শাহী পান, চিটাগাংয়ের পানের খ্যাতি দেশ জুড়া। সেই রকম ভাবেই এই মাগুরাসহ আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে মাগুরার আলোমখালী বাজারের বিশেষ সুগন্ধিযুক্ত সুস্বাদু মিষ্টি পান। স্থানীয় ভাবে যার নাম দেয়া হয়েছে “বৌ পাগল” পান। বাংলাদেশ ও ভারত থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ধরনের ৩০ থেকে ৩২ টি উপাদানে তৈরী সুগন্ধি ভরা সুস্বাদু এ পান বৌদের মন জয় করে বিধায় এর নাম হয়েছে বৌ পাগল করা পান। এই পান খেতে ও বাড়ির বৌদের জন্য মিষ্টি “বৌ পাগল” করা এ পান নিতে দূর দুরান্ত হতে মানুষ ছুটে আসছেন এই আলোমখালী বাজারে। মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের মাগুরার শেষ প্রান্ত, ঝিনাইদহ জেলার সিমান্তবর্তী আলোমখালী বাজার। এই বাজারে অবস্থিত পানের দোকান গুলির মিষ্টি, সুগন্ধি ভরা সুস্বাদু পান আশপাশ অঞ্চলের মানুষের কাছে বেশ প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। এ পানের স্বাদ নিতে মাগুরা সদর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই বাজারে আসেন অনেকেই। পার্শবর্তী ঝিনাইদহ অঞ্চলের মানুষও এখানে আসেন সুস্বাদু এই পানের টানে। প্রতিদিন এক জন পান বিক্রেতা ৭শ হতে ৮শ পিস খুচরা পান বিক্রি করে থাকেন। নাম দিয়েছেন বৌ পাগল করা পান। এই পানের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে এই আলোমখালী বাজার। সাধারণত একটি পানে সুপারি, জর্দা, চুনসহ দুই তিন প্রকার উপাদান দিয়ে তৈরী করা হলেও ৩০ থেকে ৩২ প্রকার সুস্বাদু, সুগন্ধি যুক্ত উপাদানে তৈরী হয় বিশেষ মিষ্টি এই “বৌ পাগল” করা পান। আলোমখালী বাজারে রকমারি মশলা সমৃদ্ধ পানের দোকানদার প্রসিষ বিশ্বাস জানান প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ বাজারে পানের দোকান পরিচালনা করছেন তিনি। পান বিক্রেতা প্রশিষ বিশ্বাস বলেন, সাধারন পান মশলার সাথে বিশেষ সুগন্ধি মিষ্টি জর্দা, মধু, যষ্টি মধু, কিসমিস, নারিকেল কুচিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ৩০ থেকে ৩২ টি বিভিন্ন ধরনের উপাদানের সংমিশ্রনে এই “বৌ” পাগল পান তৈরী করেন । এই উপাদানের সবই বাজারে প্রচলিত কোম্পানির স্বাস্থ্য সম্মত বলেই নিশ্চিত করেন তিনি । প্রতিদিন সকাল থেকে গভির রাত অবদি চলে তার পান বিক্রি। দুরদুরান্ত হতে আশেপাশের অঞ্চলের মানুষ এই পান কিনতে আসেন আলোমখালী বাজারে। ১৫ বছরের কিশোর হতে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ সকলের কাছেই সমান প্রিয় এই বৌ পাগল পান। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ১০ টাকা হতে ১০০ টাকা পর্যন্তুু বিক্রি করা হয় এই পান। গড়ে প্রতিদিন ৭শ হতে ৮শ পান খুচরা বিক্রি হয় তার। দিন দিন এই পানের প্রসার বেড়েই চলেছে বলে জানান এই দোকানি। পান নিতে আসা মাগুরার ক্লিনিক ব্যাবসায়ী শিবলু মোল্লা জানান, এ পানের জন্ই রাত্রি বেলা প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আলোমখালী বাজারে এসেছন। তিনি পান খেয়ে যান সাথে বাড়িতে বৌ ও মায়ের জন্যও নেন এ মিষ্টি পান। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার আলোমখালী পান খেতে আসেন তিনি। সারাদিনের কর্মব্যাস্ততা শেষে এই বৌ পাগল করা মিষ্টি পান হাতে বাড়ি ফিরলে বৌ এর খুশিভরা মুখ দেখতে পান বলেই মিষ্টি হেসেই জানান তিনি। দোকানে পান নিতে আসাআন্তঃজেলা ট্রাকের আরেক হেল্পার জানালেন, মহাসড়ক ধরে এই পথে ঝিনাইদহ আসা যাবার সময় এই বাজার থেকে পান নিয়ে যান তারা। একসাথে ৮ থেকে ১০ টি পান বানিয়ে রাখেন গাড়িতে। বাড়ি ফেরার পথেও নিয়ে যাবেন বলে জানালেন তিনি। এ পথে এলে আলোমখালী বাজারের পান খেয়ে যাবেন সেই সাথে সুস্বাদু মিষ্টি পানে বৌকে পাগল করা খুশি দিতে বাড়ির জন্য “বৌ পাগল” করা এই পান নিতে ভুলবেন না যেন।