পর্নোগ্রাফির শিকার ভুক্তভোগী এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সম্ভম রক্ষায় দায়েরকৃত মামলার রায়ে তার প্রতীকী নাম ব্যবহার করে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। গত সোমবার দেওয়া এ রায়ে মামলার বাদী ওই মেয়েটিকে ‘কল্প’ নামে অভিহিত করেছেন তিনি। দেশের বিচার ব্যবস্থায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কিংবা বিচারপ্রার্থীর নিজ নামের পরিবর্তে এইরুপ প্রতীকী নামে রায় ঘোষণার ইতিহাস এটিই প্রথম নজিরবিহীন এমনটি দাবি আদালত সংশ্লিষ্টদের। অশ্লীল ছবি সংরক্ষণ এবং প্রচারের অভিযোগে ২০১৭ সালে কলেজপড়ুয়া ওই মেয়ে মামলা দায়ের করেন। বাদির দায়েরকৃত মামলার তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সোমবার বিকালে আসামি যুবায়ের হোসেনকে দোষীসাব্যস্ত করে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাথে এই জরিমানার অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভিকটিম প্রাপ্ত হবেন বলে নির্দেশনা দেন বিজ্ঞ বিচারক এবং রায়ে ভুক্তভোগী মেয়েটির প্রকৃত নাম উল্লেখ না করে প্রতীকী নাম হিসাবে তাকে ‘কল্প’ নাম উল্লেখ করা হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জুবায়ের হোসেন দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ‘কল্প’র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে এক পর্যায়ে ঘনিষ্টতার সুযোগে মেয়েটির ব্যক্তিগত কিছু ছবি নিজ মোবাইল ফোনে ধারণ করে সে। বিষয়টি জানতে পেরে কল্প তার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন। এর পর ধারণকৃত এসব ছবি মুছে ফেলা হয়েছে জানিয়ে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালায় আসামি জুবায়ের। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় সে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত কল্পের ছবিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে। এ অবস্থায় কল্প ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট থানায় বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার এ রায়ের বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদা বেগম বলেন, ‘পুলিশি তদন্তের পর সাক্ষ্য প্রমাণাদি শেষে বিজ্ঞ বিচারক জিয়াউর রহমান আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে এই মামলার যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন’। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এই ধরনের রায়ের কোনো নজির না থাকায় বিজ্ঞ বিচারক ইন্ডিয়ান সুপ্রীম কোর্টের ছদ্মনাম ‘নির্ভয়া’র একটি মামলা এবং ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত দুজন আসামির প্রকৃত নামের পরিবর্তে ‘এন ওয়ান’ এবং ‘এইচ ওয়ান’ অবিহিত করে রায় প্রদানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। আলোচিত এই মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী শফিকুজ্জামান বাচ্চু জানান, ‘নারীর ক্ষমতায়নে ও স্বাধীনতা চর্চায় উন্নত দেশের তুলনায় আমরা পশ্চাদপদ অবস্থানে। ব্রিটেন আইন করে সে দেশে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ধর্ষণসহ যৌন অপরাধে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ নিষিদ্ধ। আমাদের দেশেও ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ পায় এমন কিছু প্রকাশও নিষিদ্ধ। কিন্তু কেউ তা মানছে কেউ মানছে না। এ অবস্থায় ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ না করে রায় প্রদানের ঘটনা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। মাগুরা আদালতের নজির বিহিন এই রায়ে বাদি “কল্প” সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী ওয়াজেদা বেগম।