আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম/গাড়ি চলে না চলে না/বন্দে মায়া লাগাইছে-এরকম অসংখ্য গানের স্রস্টা হাওর পাড়ের কৃতি সন্তান, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল। যার গান আইয়ুব বিরোধী, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত হতে সহায়তা করেছে। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে সিলেটের নুরজাহান জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শাহ আব্দুল করিমের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে উজান ধল গ্রামে তার স্ত্রী সরলার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। এ বছর মহামারী করোনার জন্য দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা যাচ্ছে না। বাউল সম্রাটের একমাত্র পুত্র শাহ নূর জালাল জানান, শনিবার বক্তরা নিজ নিজ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাবার প্রতি শ্রদ্বা জানাবেন। আর ইচ্ছা থাকলেও বাড়ির সামনের জায়গা মাটি ভরাট না থাকায় আমাদের অনেক অনুষ্টান করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের দৃষ্টি আমার পরিবারের প্রতি থাকবে বলে আমি বিশ^াস করি। ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল আশ্রম গ্রামে ১৯১৬ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারী শাহ আব্দুল করিম জন্ম হয়েছিল একটি কৃষক পরিবারে। শাহ আব্দুল করিমের জন্মের সময় তখনকার সমাজ, পরিবেশ, পরিস্থিতি ইংরেজদের আনুকূল্যে গড়ে উঠেছিল। শাহ আব্দুল করিম বেড়ে ওঠার সময় লোক সাহিত্যের একটি উজ্জল পরিবেশ ছিল। তার পিতা ইব্রাহীম আলী মা নাইওরজান বিবি। জন্মের পর থেকে অভাবের মধ্যে তার জীবন বেড়ে উঠে। অভাবের কারণে শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। তাই গ্রামের মড়লের বাড়িতে গরু রাখালের চাকরি নিয়েছিল। সারাদিন মাঠে গরু ছড়াতেন আর গান গাইতেন। এ গানই রাখাল বালককে বাউল সম্রাটে পরিণত করেছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সিলেটে গণসংযোগে আসতেন তখন তাদের সফরসঙ্গী হতেন বাউল আব্দুল করিম। ১৯৬৭ সালে শেখ মুজিব পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সুনামগঞ্জে প্রথম সরকারী সফরে আসেন। কোন এক কারণে সেদিন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর জনসভা বর্জন করেছিলেন। তখন শাহ আব্দুল করিম জনসভাস্থলে এসে গান ধরেন তখন জনসভাস্থল লোকে লোকারন্ন হয়ে উঠে। শাহ আব্দুল করিমের গানের বিভিন্ন বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় আফতাব সঙ্গীত, ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয় গণসঙ্গীত, ১৯৮১ সালে কালনীর ঢেউ, ১৯৯০ সালে ধলমেলা, ১৯৯৮ সালে ভাটির চিঠি, ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্র।