প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বব্যাপী অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। খাবারের সন্ধানে রান্নাঘরে কুকুর ও রোগীর বিছানায় শুয়ে আছে বিড়াল। সরেজমিনে বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হাসপাতাল) দেখা গেছে অস্বাস্থ্যকর এমনই সব অদ্ভুত দৃশ্য। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা বেখেয়ালির কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা পরিষেবার অবস্থা কতটা বেহাল তা এই চিত্র থেকেই বোঝা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি শুরুতে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হলেও জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরের অবস্থা একদম শোচনীয়। প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অসংখ্য রোগী নানা অব্যবস্থাপনার শিকার হন। স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসকের মধ্যে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসাব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে ভেঙে পড়েছে।হাসপাতালে কুকুর ও বিড়ালের অবাধ বিচরণ দীর্ঘদিন ধরে। রোগীদের শয্যার চারপাশে ঘুরে বেড়ায় বিড়াল। রোগীদের খাবারে মুখ দেয় কুকুর এবং বিড়াল। কিন্তু এ নিয়ে হাসপাতালের কারো কোনো মাথাব্যথা যেন নেই। কেউ কুকুর তাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অথচ কুকুর ও বিড়াল অনেক রোগের জীবাণু বহন করে। কুকুর জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস বহন করে।হাসপাতালের বিড়াল ডাস্টবিনে ঘোরে সেখান থেকে জীবাণু নিয়ে বিছানায় উঠে বা খাবারে মুখ দিয়ে জীবাণু ছড়াতে পারে। এছাড়া বিড়ালের আঁচড় থেকেও রোগ হতে পারে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের।হাসপাতালের মেঝে যেন ডাস্টবিন, ছড়ানো নানা ময়লা-আবর্জনা। বেডগুলো এলোমেলো,বেডে বিছানো কাপড়গুলো অপরিষ্কার, ময়লা ও রক্তমাখা। সব সময়ই বিছানা গুলো এমন থাকে, বিছানা রোগীদের পরিষ্কার করতে হয়। মেঝেতে কাগজ, তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, ওষুধের প্যাকেট ছড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে। আর শৌচাগারের সামনে দিয়ে সবাইকে নাকে কাপড় দিয়ে চলতে হচ্ছে। ওই অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান কুকুর ও বিড়াল সময়ে সময়ে হাসপাতালের কক্ষে এসে প্রবেশ করে। খাবারের সন্ধানে জিনিসপত্রে মুখ দেয়। কাপড় ও কাগজপত্র ধরে টানাটানি করে। কুকুরকে তাড়াতে গেলে কুকুরও তেড়ে আসে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে কুকুর, বিড়ালের এমন অবাধ বিচরণ দেখে তারা হতবাক হয়েছেন।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাবুর্চি রোজিনা খাতুন জানান, প্রধান ফটক হয়ে অফিস কক্ষ, জরুরি বিভাগ, স্টোর রুমের সামনে দিয়ে কুকুর কখন কিভাবে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে তা বুঝে উঠতে পারছি না। এর আগে কখনও এরকম হয়নি। কুকুর যেন এভাবে আর প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা.গাজী সালাহ উদ্দিন জানান, আমি হাসপাতালের আবাসিকে থাকি না। আর এ বিষয়গুলো আমাকে কেউ বলেনি। আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানলাম। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।