জামালপুর সদরসহ সব থানাতে কমতে শুরু করেছে দালালদের দৌরাত্ম। জামালপুর জেলার সম্প্রতি নবাগত পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএম সেবার সার্বিক দিক নির্দেশনায় ও জেলার সকল থানার ওসিদের তৎপরতায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের দিকে। তবে কিছু বিচ্ছিন্ন চুরির ঘটনা রোধ করা গেলে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে দাবি জেলাবাসীর। গত ৫ আগস্টে হাসিনা সরকার পতনের পর সারাদেশের ন্যায় জামালপুর জেলারও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যেতে থাকে। এরপর অন্তবর্তিকালীন সরকার বাংলাদেশ পুলিশে বড় আকারের রদবদল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জামালপুরের পুলিশ সুপারসহ ৭ টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি গুলোতে বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারি বদলি এবং যোগদান সম্পন্ন হয়। ৭ টি উপজেলা ও ৮ পৌরসভা নিয়ে গঠিত জামালপুর জেলা শান্তিপ্রিয় জেলা হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি থাকলেও বিগত কয়েক বছরে ছোট ছোট নানা অপরাধের সাথে ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনা তুলনামূলক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। শুধু তাই নয় শহর থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদ পর্যন্ত ছিল মাদকের ভয়াল থাবা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে পুলিশের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। জামালপুরে পুলিশ বাহিনীর এই মহৎ কর্মকান্ড গুলোর প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো মধ্যস্থকারবারি বা দালালরা। জেলার প্রত্যেকটি থানার চিত্র ছিল প্রায় একই। জানা যায়, পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দালালরা তাদের ফায়দা হাসিল করতো। এতে করে অনেক অপরাধীরাই ছিলো আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর অনেক নিরপরাধ মানুষ পেত আইনের সাজা। দালালদের কারণে হয়রানি মূলক অনেক গায়েবি মামলার গ্লানি টানছেন অনেক সাধারণ মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, বিগত সরকারের আমলে থানায় একটা মামলা দিতে গেলে পুলিশ সহজে মামলা নেয়নি। তবে পুলিশের কতিপয় দালালদের টাকা দিলে মামলা দায়ের খুব সহজেই করা যেত। তারা আরও জানান, এই দালালদের কারণে তাদের অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। দালালরা একটা সহজ বিষয়কে অনেক সময় জটিল করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো। তবে জামালপুর জেলার থানা গুলোতে এখনকার চিত্র খানিকটা ভিন্ন। জামালপুর সদর থানা সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় মানুষ এখন নির্বিঘ্নে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে পারছে। মামলা যোগ্য কোন অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের যেন এখন অনেকটাই সহজ। থানার আশেপাশে যেসব জায়গা গুলোতে দালালদের আনাগোনা ছিল সেসব স্থানে তাদের আর দেখা যায় না। এছাড়াও জামালপুর ডিবির অফিসার ইনচার্জ মো. নাজমুজ সাকিব কিশোর গ্যাং এর উৎপাত, মাদক, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, মারামারি, চুরি ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমনে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ফয়সাল মো. আতিক জানান, পুলিশ জনগনের বন্ধু, সেবাই পুলিশের ধর্ম এই কথাগুলো শুধু সাইনবোর্ডে নয় তা বাস্তবে প্রমাণ করে দিতে চাই। জামালপুর সদর থানার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে যে কেউ তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আসবে এটাই স্বাভাবিক। এই থানাতে জিডি কিংবা মামলা করতে কোন টাকা লাগে না। তবে দালাল তো দূরের কথা কোন পুলিশ কর্মকর্তাও যদি টাকা লেনদেনের সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জামালপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএম সেবা বলেন, জামালপুর জেলাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । আইনশৃঙ্খলা সভা, গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে সভাসহ জেলার বিভিন্ন সুধীসমাজের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এ জেলার সমস্যা গুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। বর্তমানে সকল থানার পুলিশ মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পুলিশ নিঃসন্দেহে তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করবে। এসময় জেলাবাসীর কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বর্তমান পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএম সেবা যোগদান করার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদা ও এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজের সাংবাদিক জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবি মানুষ ও সুধীমহলের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে ।