লক্ষ্মীপুর শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে বাসা বেঁধেছে লাগামহীন দুর্নীতি। সমাজসেবার সেবাদানে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অফিসের বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাত, একগুয়েমি, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রকল্পের টাকা নয়-ছয়সহ নানা অভিযোগ এনে মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী এ অভিযোগ করেন। তিনি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র ধর এর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন অভিযোগে। অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ২০১৮ সালে যোগদান করেন এবং শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা ২০২১ সালে যোগদান করেন। জানা যায়, শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে জেলার বেকার যুবক-যুবতীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের এ প্রশিক্ষনটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৬৭০৩৪ প্রতিষ্ঠাণ কোর্ডে পরিচালিত হয়। ৬ মাস মেয়াদি (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ সেশনে) এ প্রশিক্ষণে শহর সমাজসেবার কাগজপত্রে ১০১ জন প্রশিক্ষনার্থী অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল তালিকায় ১৭০ জনের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ৬৯ জন প্রশিক্ষনার্থী স্থানীয় ইমরান আইটি ইন্সটিটিউট নামীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষনার্থী বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, সমন্বয় পরিষদকে না জানিয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র ধর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষনার্থীদেরকে সরকারি সার্টিফিকেট প্রদান করেন। এতে একদিকে সরকারি ফান্ডে ওইসব প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে নেওয়া কোন অর্থ যোগ হয়নি। যাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মর্মে জানা যায়। অভিযোগ উঠেছে, ইমরান ইন্সটিটিউট শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ না দিয়েই সমাজসেবা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারিভাবে দেয়া সনদ বিক্রি করেন। এতে ওইসব প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের অর্থ। এছাড়া এতিমের নামে বরাদ্দ করা সরকারি টাকা লুটপাটেরও অভিযোগ উঠেছে। কাগজে কলমে এতিমখানাগুলোতে যাদের এতিম দেখানো হয়েছে এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সরেজমিনে নেই। লক্ষ্মীপুর শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র ধর বলেন, এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। যে কেউ কম্পিটারে প্রশিক্ষণ না নিয়ে যদি নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে চায়। ৬০০ টাকায় রেজিষ্টেশনের মাধ্যমে সমাজসেবা থেকে পরিক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এতে করে তিনি সরকারি সনদ নিতে পারবেন বলে দাবি করেন তিনি। জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, মহাপরিচালক বরাবরে অভিযোগের বিষয়ে জানা নেই। এনিয়ে এখনো কোন চিঠি পায়নি। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী নাজিমুল ইসলাম বলেন, লক্ষ্মীপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের অনিয়মের বিষয়ে আমাকে তদন্ত দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পবিত্র হজ্ব পালন শেষে সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।