পাশে দাড়াতেই গা শিউরে উঠে। এ বুঝি ভেঙ্গে পড়ছে গায়ের উপর। ভেতরে অন্ধকার মাঝে মাঝে মেঝেতে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়ালের ফাঁক ফাঁকে গজে উঠেছে ছোট ছোট আগাছা। ভেতরে বাসা বেঁধেছে কোন উড়ন্ত পাখি। এ যেন বহুদিনের পুরনো একটি ভূতুড়ে বাড়ি। আসলে তা নয় এটা একটা সেবা কেন্দ্র যেখানে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। চার পাঁচ বছর ধরে পরিত্যক্ত হলেও স্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর থেকে ঘোষণা না আসায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে বসেই এতদিন সেবা কার্যক্রম চলমান ছিল। কিন্ত পাঁচ মাস যাবৎ সেবা দেয়া বন্ধ। গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে কর্তৃপক্ষের পরিত্যক্ত ঘোষণার পর বন্ধ হয়ে গেছে সেবা। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মেখল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ওই এলাকার একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। প্রতিদিন গড়ে দুইশ’র অধিক মানুষ সেবা নিত এ কেন্দ্রে। হাটহাজারী-মেখল-গড়দুয়ারা সড়কের পাশে অবস্থিত এ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন এলাকাবাসী। তার প্রধান দুটি কারণ প্রথমত গ্রামের সাধারণ মানুষ কোন ফি ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা পেতেন দ্বিতীয়ত চিকিৎসার পাশাপাশি পেতেন ফ্রি ওষুধ যা সেবনে দ্রুত সুস্থ হয়ে যেতেন কারণ হিসেবে তারা জানান, সরকারি ওষুধের গুনগতমান ভাল। হালকা জ্বর, গা ব্যাথা, মাথা ব্যাথাসহ কাটা ছেঁড়ায় খুব যতনে চিকিৎসা দিতেন কর্তব্যরত উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও ভিজিটর। এখন বন্ধ থাকায় তাদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি চিকিৎসালয় কেন্দ্রে সাথে গুনতে হচ্ছে ফি। তবে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকলেও নবজাতক ও শিশুদের টিকাদান সেবা অব্যাহত আছে পার্শ্ববর্তী পূর্ব মেখল পেষ্কার বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সরেজমিনে কেন্দ্রের পাশের একটি টি স্টলের সত্ত্বাধিকারী মোঃ আব্দুল ওহাবের পুত্র মোঃ মোফাচ্ছেল বলেন, মেখল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা খুবই ভাল ছিল। দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিলে অন্য চিকিৎসক দেখানোর প্রয়োজন ছিল না। চিকিৎসার পাশাপাশি ফ্রি ওষধ পেতাম। এখন যে কোন চিকিৎসার জন্য এলাকার ফার্মেসী কিংবা হাটহাজারী সদরে যেতে হয়। তিনি বলেন, কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চা বিস্কুট খেতে আমাদের দোকানে আসতেন ফলে আমাদের ব্যবসাও আল্লাহর রহমতে ভাল চলছিল। ওই ওয়ার্ডের গাজি বাড়ির সত্তোরোর্ধ গাজি মোঃ ইসহাক বলেন, ৮৩/৮৪ সালে এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর গোটা গ্রামের মানুষ কখনো বাইরের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হইনি। তাদের চিকিৎসার মান ভাল ছিল। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে শুরুতে সংস্কার করতে পারতেন। কোন সংস্কার না করায় ধীরে ধীরে সেবা কেন্দ্রটি জরাজীর্ণ ও অত্যধিক ঝ্ুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। আজ তার খেসারত দিতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। মেখল ইউনিয়নের ২০/৩০ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে কয়েক বছর আগেও পুনঃ নির্মাণের চেষ্টা করে সীমানা জটিলতায় করা সম্ভব হয়নি এমন অভিযোগকে নাকোচ করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে জায়গা বিক্রি করা মরহুম ছালেহ আহম্মদের পুত্র মোঃ কামাল উদ্দিন (৬৬) বলেন, আমার বাবা ও চাচা আমার চাচা ফজল আহম্মদ এবং প্রতিবেশী ইছহাক মাষ্টার চাচা সর্বমোট ৪৪ শতক জায়গা বিক্রি করে তার সীমানা পিলার দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন। যা এখনো দৃশ্যমান। চার পাঁচ বছর ধরে ভবন পুনঃ নির্মাণ হয়নি কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে। এদিকে জানা গেছে কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পরেও এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে অস্থায়ী কার্যালয় দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেবা কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ অমত তদুপরি তৎসময়ের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার অবসরে চলে যাওয়ায় সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মহিউদ্দিন জানান, পরিত্যক্ত ঘোষণার পর হাজারো মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। আমাদের চেয়ারম্যানও এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। মেখল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সালাউদ্দীন বলেন, কয়েকবছর থেকেই মেখল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভবন জরাজীর্ণ ও অত্যধিক ঝ্ুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে দুই দুইবার পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পরিষদের পক্ষ থেকে মেরামত করতে চাইলেও অযোগ্য বিধায় সম্ভব হয়নি। এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় এমপি মহোদয়কে নিয়ে কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। এর পরই এমপি মহোদয় ডিও লেটার দিয়েছেন পুনঃ নির্মাণে। আশা করছি দ্রুত এর কাজ শুরু হবে। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিক্সন চৌধুরী বলেন, পুনঃ নির্মাণে কাজ চলছে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি জুন মাসে টেন্ডার হবে। বাজেটের বিষয়ে বলেন, আগে একটা আড়াই তলা ভবনে ১কোট ৪০ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ হত। এখন কিছুটা বাড়তে পারে।