শীত প্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও এখন বাংলাদেশেও ব্যাপক চাষ হচ্ছে এ ফল। আকর্ষণীয় বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য স্ট্রবেরি অত্যন্ত সমাদৃত। অল্প পুঁজি, স্বল্প শ্রম কিন্তু লাভ অনেক বেশি। এ ফল চাষে অল্প দিনেই সফলতার মুখ দেখেছেন অনেক কৃষকরা। গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকরা। এবার স্ট্রবেরি চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সরবরাহ করছেন। তা দেখে এ অঞ্চলের কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষে উদ্যোগী হয়ে উঠছেন। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার পৌরসভার কেওয়া, বরমী ইউনিয়নের বরমা, গাড়ারন, গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা, গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ এবং তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছে। জানা যায়, ১৭৪০ সালে ফ্রান্সে প্রথম স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে চিলি ও আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করে। শীতপ্রধান দেশের ফল স্ট্রবেরি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে।

শ্রীপুর উপজেলা বরমী ইউনিয়নের বরমা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করতে হয়। এ জন্য পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে ৫ থেকে ৬টি চাষ করে জমির মাটি ঝরঝরে উপযোগী করে নিতে হয়। তারপর সার, গোবর ও ক্যালসিয়ামের অন্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। বিঘা প্রতি সবট্রবেরি চাষে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। অপর কৃষক আশরাফুল জানান, মৌসুমের শুরুতে স্ট্রবেরির সাদা ফুল ফোটে। পরে হলুদ রঙের ফল ধরে। সবশেষে পাকা লাল টুকটুকে রং ধারণ করে। একটি চারা গাছ থেকে মৌসুমে কমপক্ষে দুই কেজি ফল পাওয়া যায়। বরমী ইউনিয়নের বরমা গ্রামের কৃষক আজিজুল হক বলেন, এলাকার লোকজনদের কাছে শুনে প্রথমে সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে ছুটে যাই। স্ট্রবেরি বাগান দেখে ভালো লেগেছে। বাগান থেকে নিজ হাতে ছিড়ে স্ট্রবেরি খেয়েছি। বেশ ভালো স্বাদ লেগেছে। সাইফুল ভাইয়ের বাগান দেখ আমিও স্ট্রবেরি চাষে উদ্যোগী হয়েছি। স্ট্রবেরি চাষে বেশি খরচ হয় সেচ দিতে। এ পর্যন্ত ২৫-৩০ বার সেচ দিয়েছেন। স্ট্রবেরির বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তারা গাছ থেকে স্ট্রবেরি নিজ হাতে ছিড়ে খাচ্ছে। অনেকেই এখন স্ট্রবেরির চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গাজীপুরে শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন উপজেলার গোদারচালা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে শিক্ষিত বেকার যুবক তোফায়েল আহমেদ। তিনি স্ট্রবেরি চাষ করে স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এটি সারা বিশ্বের জনপ্রিয় একটি ফল। দেখতে কিছুটা লিচুর মতো। অনেকে বাড়ির ছাদে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তিনি দেড় বিঘা জমিতে সাড়ে চারশ স্ট্রবেরি চারা রোপণ করেছেন। দৈনিক ১৫ থেকে ২০ কেজি স্ট্রবেরি জমি থেকে তুলে থাকেন। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি পাঁচশ থেকে সাতশ টাকা বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। আমার স্ট্রবেরি চাষ দেখে এলাকার অনেক কৃষক আগামী মৌসুমে এ ফল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, স্ট্রবেরি উচ্চমূল্য, রসালো এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় এটি সারাবিশ্বে সমাদৃত। উচ্চ ফলনশীল স্ট্রবেরি বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করার মাধ্যমে বেকারত্ব এবং পুষ্টি ঘাটতিও পূরণ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা হওয়ায় এটি চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলছে।