বগুড়ায় গাছে গাছে ফুটে আছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে তুলে। মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছিরা ভিড় করছে আম গাছের ডালে ডালে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে আমের এই মুকুলগুলো। হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়া মুকুলের ঘ্রাণ প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসেছে মনের আনন্দে। পাশাপাশি জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। বগুড়া সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ,শাজাহানপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, ধুনট, শেরপুর সারিয়াকান্দি,সোনাতলা উপজেলা সহ গ্রামাঞ্চলের বাসা-বাড়িতে রোপণ করা আম গাছগুলোতে ফুটতে শুরু করেছে মুকুল। শুধু বাসা-বাড়িতেই নয়, অনেকে বাণিজ্যিক ভাবেও করছেন আম বাগান। এছাড়া অফিস-আদালত কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আম গাছেও বাতাসে দোল খাচ্ছে মুকুল। এখন প্রকৃতির খেয়ালে স্বর্ণালীরূপ ধারণ করেছে আবহমান গ্রামবাংলা। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রতি টি আমগাছে আশানুরূপ মুকুল আসতে শুরু করেছে। এসব মুকুল থেকে বেশি পরিমাণ আম পাওয়ার আশায় ইতোমধ্যে গাছগুলোতে ঔষধ প্রয়োগসহ নানামুখী পরিচর্যা গ্রহণ করা হয়েছে। আম বাগানের মালিকরা বলছেন, আমের ফলন নির্ভর করছে এবার আবহাওয়ার ওপর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা। খোরশেদ আলম আম চাষী বলেন,বগুড়ার প্রত্যেকটা উপজেলাতে এমন কোনো বাড়ি নেই যে,আমগাছ নেই। প্রতি টি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ছে আমের মুকুল। শুধু আমের মুকুলই নয়, লিচু, লেবু প্রভৃতি ফলের গাছের মুকুলের ঘ্রাণে চারিদিক মৌ মৌ করছে। এসব মুকুলের সুবাস যেন মুগ্ধ করে তুলেছে মানুষকে। কাহালু উপজেলার আবুল হোসেন আম চাষী বলেন, কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ করছে। বিদেশি জাতের আমগাছগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বাম্পার ফলন পাওয়া যেতে পারে। ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি গ্রামের আম বাগানের মালিক ইমরান হোসেন ইমন জানান, তিনি ব্যানানা ম্যাংগো, কিউ জাই, ব্লু-নাইকিংসহ বিদেশী বিভিন্ন জাতের আম গাছে মুকুলে ভরে গেছে। তার বাগানে দেশী-বিদেশী জাতের মোট ৪০ টি আম গাছ রয়েছে। বাগানে ১লা ফাল্গুন থেকে আমের মুকুল আসতে শুরু করে। বর্তমানে তার বাগানে মুকুলে ভরে গেছে। কৃষি অফিসের পারামর্শে সময়মত ওষুধ স্প্রেসহ পরিচর্যা করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর ভালো ফলনের আশা করছেন। বাজারে ব্যানানা ম্যাংগো, কিউ জাই, ও ব্লু-নাইকিং জাতের আমের চাহিদা বেশি। দামও ভালো পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশী জাতের হাড়ি ভাঙ্গা ও আম্ররুপালি জাতের আম গাছ তার বাগানে রয়েছে। নন্দীগ্রাম উপজেলার শফিকুল ইসলাম আম চাষী জানাই, বিগত কয়েক বছর যাবৎ আম ও লিচুর আবাদ করছে উভয় গাছেই পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। তিনি আশা করছেন এবারের ফলন ভালো পাওয়া যাবে। বগুড়া কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান,জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় কৃষকরা বানিজ্যিকভাবে দেশী-বিদেশী জাতের আম বাগান করছেন। তারা নিয়মিত কৃষি অফিসে আসছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। বগুড়া কৃষি অফিস থেকে যতদূর সম্ভব তাদেরকে সকল ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আম চাষে কেউ নতুন বাগান করতে চাইলে কৃষি অফিস থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।