খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে প্রতি কেজী ১৫টাকা মূল্যের চাউল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের একাধিক ডিলারের বিরুদ্ধে। যদিও সংশ্লিষ্ট ডিলারদের দাবী, নতুন দ্বায়িত্বে আসা ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে ব্যাক্তিগত বিরোধের জেরে এ অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। আর প্রশাসন বলছে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে, কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ভবানিপুর গ্রামের সুশীল কুমার দাসের পুত্র বিষ্ণু পদ দাস প্রায় দুই বছর আগে মারা যান। বিষ্ণু দাসের ভাই সুশান্ত দাস ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবী, বিষ্ণু দাসের মৃত্যুর পরও চাউল উত্তোলন করা হলেও অদ্যবদি নিহতের পরিবার কোনো চাল পায়নি। এখানেই শেষ নয়, কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে একই পরিবারের খানাভুক্ত একাধিক ব্যাক্তির নাম তালিকাভুক্ত করা হলেও চাল দেয়া হচ্ছে না সবাইকে। এছাড়া একই ব্যাক্তির ছবি একাধিক কার্ডে ব্যবহার করে চাল তোলাসহ অনেকের কার্ড তাদের কাছে বুঝিয়ে না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ৫১২ নং কার্ডের সুবিধাভোগী শ্যামলী শীল, ১৫ নং কার্ডের সুবিধাভোগী কাউসার কাজীসহ কয়েকজন জানান কার্ড থাকলেও নিয়মিত মাল পান না তারা। এদিকে ন্যায় বিচার পেতে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এসে জড়ো হন। পরে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের নিকট তাদের নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এদিকে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান এসব অনিয়মের অভিযোগ স্বিকার করে জানান, বর্তমান ডিলাররা পুর্বে দ্বায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এ সকল অনিয়ম করেছে। তাদের দাবী, চাল বিতরনের এ অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট ডিলাররাই যুক্ত। এ ঘটনায় ডিলার মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আবু বকর সিদ্দিকী ও মো. ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের দাবী, ব্যাক্তিগত শত্রুতার জের ধরে বর্তমান চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এ অভিযোগ তুলছেন। তালিকা প্রনয়নে তাদের হাত নেই উল্লেখ করে জানান, সুবিধাভোগী মারা গেলেও তা হালনাগাদ/সহ্নিবেশিত না করায় চাল উত্তোলন হয়েছে, আগামীতে এমন হবেনা বলে জানান তারা। গ্রাম্য রাজনীতির শিকার হচ্ছেন বলে পাল্টা অভিযোগ তোলেন তারা। তবে চাল একেবারে না দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানান ডিলাররা। এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী। তিনি জানান, তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিলার বা অন্য যেই অনিয়মের সাথে জড়িত খাকুক কেউই আইনের উর্দ্ধে নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, ডিলার সাইফুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা, ইকবাল হোসেনকে অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। আর ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহ্সান তালুকদার কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, শুধু কৃষ্ণ নগরই নয় জেলার ৮১টি ইউনিয়নের যেই খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল নিয়ে অনিয়ম করবে তার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে করা তালিকানুযায়ী এ কর্মসূচীর আওতায় ফরিদপুর জেলার ৮১টি ইউনিয়নে ৮৬ হাজার তিনশ ৫০জন কার্ডধারী সুবিধাভোগী রয়েছে। এসব অনিয়ম দুর করতে বর্তমান তালিকা হাল নাগাদ করার দাবী সংশ্লিষ্টদের।