
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক,শহীদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্যের প্রয়াণ দিবস (৮ আগস্ট)। শহিদ প্যারী মোহন আদিত্য ব্যক্তি জীবনে পূর্বপাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) এর সৎসঙ্গের সহ-সম্পাদক, সৎসঙ্গের মুখপাত্র, ‘সৎসঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে নিজেকে সংবাদপত্রসেবীর মতো মহান পেশায় নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি সৎসঙ্গের ভাবাদর্শের একজন সহ-প্রতিঋত্বিক ছিলেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে “বাঁচা বাড়ার” মন্ত্র হিসেবে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আদর্শ প্রচার করতেন এবং জনহিতকর ও কল্যাণকর কাজে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমী একজন সমাজসেবক, নীতি ধর্মের ধারক-বাহক, মানবতাবাদী চেতনার মানুষ। তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেন। বাঙালি সংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। নাটক, যাত্রা, পালাগান তথা দেশাত্মবোধক সংস্কৃতির চর্চায় তিনি নিজেকে ব্যাপৃত রাখতেন এবং প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতেন এইসব শুভবোধ। তিনিমানবতার ধর্ম বিশ্বাস করতেন। মানুষ ক্ষতিগস্ত ও বিপদগ্রস্ত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো, বিপদ মুক্তির জন্য সাহায্য করাই তাঁর ধর্ম ও কর্ম ছিল। একাত্তরের অগ্নিক্ষরা উন্মাতাল সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দৃষ্টি পড়ে সৎসঙ্গ আশ্রমে। টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে বত্রিশ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পার্শ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি আশ্রম। এটি একটি জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান। আবার ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার সময় পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে হামলা চালায়। তাদের ছোড়া শেলের আঘাতে আশ্রম মন্দিরের চূড়া হেলে পড়ে। প্যারী মোহন আদিত্য মূল মন্দিরে ধ্যানস্থ অবস্থায় থাকায় তাঁকে মূর্তি ভেবে গুলি করা থেকে বিরত থাকে। বর্বর হানাদার বাহিনী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের প্রতিকৃতিকে জীবন্ত মানুষ ভেবে গুলি করে। পরে কাছে গিয়ে দেখে সেটি আসলে একটি প্রতিকৃতিমাত্র। অথচ, তার পাশেই প্যারী মোহন আদিত্য ধ্যানমগ্ন ছিলেন। এ-অবস্থায় তাঁকেও মূর্তি ভেবে গুলি করা থেকে বিরত থাকেন। আর এভাবেই এ-যাত্রা তিনি প্রাণে বেঁচে যান।