নোয়াখালীর চৌমুহনী শহরে একের পর এক দখল হয়ে যাচ্ছে সরকারী পুকুর, ডোবা, জলাশয়। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকার কারণে দিন দিন এই দখলের প্রবনতা বাড়ছে। পুকুর, ডোবা, জলাশয় দখল হয়ে যাওয়ায় শহরের যে কোন অগ্নিকান্ডের সময় পানি সংকট দেয়া দেয়। এতে ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে অগ্নিনির্বাপণ । ফলে জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে এক সময় সরকারি ৩৩টি পুকুর ও জলাশয় ছিলো। যেগুলোর চার পাড়ের বিশাল জায়গায় অবৈধ দোকান নির্মাণ করায় জনসাধারণের পানি ব্যবহারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগে পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। সুপেয় পানি এবং যেকোনো দুর্যোগে পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণে সরকারি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সরকারি সংস্থাগুলোর যথাযথ নজরদারি না থাকায় চৌমুহনী শহরের এসব পুকুর ও জলাশয়ের জায়গাগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজসে দখল করে রেখেছে। এলাকাবাসী জানান, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এসব পুকুর ও জলাশয় প্রথমে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। পরে মাটি ফেলে খুঁটি গেড়ে কৌশলে ধীরে ধীরে ভরাট করে নির্মাণ করা হয় দোকানপাট। এমনকি সুযোগ বুঝে গড়ে উঠছে বহুতল ভবনও। চৌমুহনীতে সম্প্রতি এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময়ে পুকুরের পানির অভাবে ব্যাহত হয় ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ কাজ। ফলে কয়েকশ’ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। বিশেষ করে চৌমুহনী বড় মসজিদ পুকুর, রুপবারতি সিনেমা হল পুকুর এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এ দুটি পুকুর শহরের মাঝখানে হওয়ায় এর পানি খুবই দরকার। দখলকৃত এসব পুকুর ও জলাশয় দ্রুত উদ্ধার করে তা ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। চৌমুহনীর একাধিক সচেতন নাগরিক জানান, শহরের ভেতরে অবস্থিত বড় মসজিদ পুকুর, সিনেমা হলের পেছনের পুকুর, রেল স্টেশনের পশ্চিমের পুকুর পাড়ের দোকানগুলোর কারণে অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় দুর্ঘটনায় প্রয়োজনে পানি ব্যবহার করা যায়নি। পুকুরপাড়গুলো কিছু কিছু লিজ নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ দখল করেছে। যারা লিজ নিয়ে সরকারী পুকুর ও জলাশয় দখল করছে তাদের লিজ বাতিল করে পুকুর ও জলাশয়গুলো পুন:সংস্কার করা দরকার। বেগমগঞ্জ সহকারী কমিশনা(ভূমি) আসিফ আল জিনাত জানান, যে কোন সময় সরকারী পুকুর বা জলাশয় দখলের খবর পেলে আমরা সাথে সাথে তা উচ্ছেদের চেষ্টা করি। সরকারী পুকুর বা জলাশয় দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মান করার সুযোগ নেই। কেউ এমন করলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান জানান, সরকারী পুকুর-দীঘি ও জলাশয় দখল এবং ভরাট রোধে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারদের(ভূমি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।