বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে সুষ্ঠু প্রজনন, বংশ বিস্তার বাড়াতে সব ধরনের মাছ ধরায় ৬৫ দিনের (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকারিতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলেরা। জেলেদের দাবি, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা। সরকারের উচিত ছিল ভারতে আর বাংলাদেশে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। এর আগে সাগরে মাছ ধরা বন্ধে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে উপকূলীয় মৎস্যজীবী ও মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের পটুয়াখালী জেলা শাখা’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃমামুন জানান বছরের বিভিন্ন ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার ফলে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। জেলেরা যে সরকারি সহায়তা পান, তা অনেক কম। ফলে জীবন কাটে চরম দুর্দশায়। মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতেই আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সরকার প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দিয়ে থাকে। নিবন্ধিত জেলেদের এসব চাল দেওয়া হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে আমাদের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলোচনা করবো যাতে করে আগামী বছর গুলোতে নিষেধাজ্ঞা মূহুর্তে জেলারা ভালো থাকার জন্য দলীয়ভাবে সাহায্য সহোযোগিতা আরও বৃদ্ধি পায়। জেলেরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুর ও কুয়াকাটায় জেলেরা কয়েক দফা মানববন্ধন, মিছিল করেছেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কোনো কিছুতেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি বলে জেলেরা জানান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেলেদের করা অভিযোগ,ভারতীয় জেলেরা ইচ্ছে করেই বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে প্রতিনিয়ত মাছ শিকার করে। তারা উন্নত মানের ফিশিং বোট নিয়ে মাছ শিকার করে। নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের দেখলেই দ্রুত নিজেদের জলসীমায় পালিয়ে যায়।মৎস্য অফিস জানায়, প্রতিবছর আশ্বিন মাসে (৭-২৮ অক্টোবর) গভীর সাগর থেকে মা ইলিশ উপকূলের দিকে এসে ডিম ছাড়ে। কয়েক বছর ধরে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে ৪৩৫ প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ রয়েছে, যা সংরক্ষণ ও প্রজননের স্বার্থে এবং সমুদ্র নির্ভরশীল অর্থনীতির টেকসই উৎপাদন ও বাস্তবায়নের জন্য সরকার ৬৫ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে। তবে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে সরকার প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দিয়ে থাকে। নিবন্ধিত জেলেদের এসব চাল দেওয়া হয়। মো: জলিল নামে একজন বলেন, অনেক জেলে যারা নিবন্ধন করাতে পারেননি। অথচ অনেক ভুয়া লোক জেলে দাবি করে সরকারের সাহায্য নিচ্ছে। সালাম নামের এক জেলে বলেন, আমরা এখন পথের ভিখারি হয়ে গেছি। মাছ ধরে সংসার চালাতে হয়। বাবা-মা বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার এখন আর চলে না। মহিপুর মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মাসুম ব্যাপারী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে একই সময় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক। একই সাগরে দুই রকম আইন হয় আমাদের করছে সর্বস্ব হারা। সাধারণ জেলে ও মৎস্যজীবী পেশার সাথে নিয়োজিত বিশাল জনগোষ্ঠী বলছেন জেলেরা সাগরে নামতে না পারলে খাবেন কি? তাই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে অনেক জেলে জেল জরিমানার ভয় উপেক্ষা করে মাছ ধরতে যায়। এ সময়ে শুধু বাংলাদেশের জেলেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে হবে না, পাশের দেশ মিয়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মাছ ধরার জাহাজ ও ট্রলার যেন বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্যও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আলীপুর ট্রলার মালিকও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, বার বার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমানোর দাবি জানিয়েছে জেলে ও ব্যবসায়ীরা। ভারতে এই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৪৫দিন। ফলে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ৬৫ দিন ইলিশ বন্ধ রাখার জন্য মৎস্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। ভারতীয় জেলেরা ইলিশ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নৌ-বাহিনীর হাতে। তারা বহিরাগতের নিয়ন্ত্রণ করবে। আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি।