কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে মুহূর্তের মধ্যেই নরক নেমে আসে ভারতের ওড়িশার ট্রেন যাত্রীদের ওপর। ভয়াবহ সেই ট্রেন দুর্ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা। প্রত্যাক্ষদর্শীরা বলছেন, কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে মৃত্যুকূপে পরিণত হয় ট্রেনটি। মুহূতেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সবকিছু। কেউ হারিয়েছেন প্রিয় সন্তান, কেউ হারিয়েছেন স্বজন। কেউবা হারিয়েছেন নিজের অঙ্গ।
দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে ফেরা এক যাত্রী জানান, আমি যখন বগি থেকে কোনমতে বের হয়ে আসি তখন দেখি কারও হাত নাই, কারও পা নাই, কারও চেহারাই বোঝা যাচ্ছে না। মানুষ ছোটাছুটি করছে। খবর এএনআই’র।
ট্রেনের যাত্রীরা বলছেন, চালক আগ থেকে কোন ধরণের সকর্তবার্তা পাঠায়নি। এমনকি নিজেকে রক্ষায় এক মুহূর্ত সময়ও পাননি তারা। চোখের পলকে ঘটে গেছে সবকিছু।
এক যাত্রী বলেন, অ্যাক্সিডেন্টের পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি চার পাশে শুধু মানুষের আর্তনাদ আর আহাজারি। আমিও হাতে এবং হাঁটুতে ব্যাথা পেয়েছি।
দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে ফেরা এক যাত্রী জানান, কিছু কেনার জন্য আগের স্টেশনে নেমেছিলেন। কিন্তু তার না ফিরে এসে কামরায় দাড়িয়ে অন্য যাত্রীর সাথে আলাপ করছিলেন। এসময় দুর্ঘটনা ঘটে। এতেই রক্ষা পেয়ে যান তিনি।
ওড়িশার প্রশাসন বলছে, আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ারসার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি বাহিনীর সদস্যরা। ট্রেনের ভেতর থেকে একে একে বের করে আনা হচ্ছে মরদেহ। হাসপাতাল আর মর্গে বাড়ছে স্বজনদের ভিড়। এমনকি দুর্ঘটনাস্থলেও ছুটে আসছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। এখনো মরদেহ হস্তান্তরের কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি।
ভুবনেশ্বরের কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে জানান, ২০০ টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০ টি বাস ও ৪৫ টি মোবাইল হেলথ ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। এছাড়া ১২০০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন ঘটনাস্থলে। জানা গেছে, মৃতদেহগুলো যেভাবে যে যানবাহনে পারা গেছে সেভাবেই বহন করা হয়েছে। একজন স্বেচ্ছাসেবী জানিয়েছেন, মরদেহগুলো হাসপাতালে নিতে ট্রাক্টরও নেওয়া হয়েছে।
এতো বড় দুর্ঘটনা নিয়ে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। আগাম সকর্তবার্তা না দেওয়ায় দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। এই দুর্ঘটনায় ওড়িশা ও তামিল নাড়ুতে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া হতাহতের পরিবারের প্রতি শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরন্দ্র মোদি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় রিলিফ ফান্ড থেকে নিহতদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি দেওয়া ঘোষণা দিয়েছেন।