রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১২ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও একজন স্বেচ্ছাসেবী। এছাড়া ৯ জন দোকান কর্মচারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এখন পর্যন্ত আটজন ফায়ার ফাইটার আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, এরা কেউ গুরুতর নয়। ধোয়ায় তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাদেরকে অবজারভেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া দোকান কর্মচারী বায়জিদ (২৫), হাসান (২০) ইয়াছিন (২৪), স্বপন (২৩), রিমন (২৮), কামাল হোসেন (৩৩), ফিরোজ আলম (৩০), জিসান (১৮), দোকান মালিক জীবন (৩০), জীবন (২২)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, নিউমার্কেট এলাকায় নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নিভাতে গিয়ে ধোয়ায় অসুস্থ্য হয়ে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যসহ ২২ জন এই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিউ মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনা ও বিমানবাহিনীর অগ্নি নির্বাপনী সাহায্যকারী দল যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনীও এতে যুক্ত হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, নিউমার্কেটের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা, আশেপাশের এলাকার পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছে বিজিবি। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ সেখানে ১২ প্লাটুন বিজিবির মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে আজ ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন লাগে। পরে আগুন পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট কাজ করছে।
ভোরে লাগা আগুন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঢাকা কলেজের পুকুর থেকে পানি ব্যবহার করছেন। নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছে। মার্কেটটিতে বহু পোশাকের দোকান রয়েছে। নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলার দোকানিরা তাদের মালামালা সরিয়ে নিচ্ছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে নিউ সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে আহাজারি করতে দেখা গেছে। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা দোকানে বেশি বেশি পণ্যের পসরা সাজিয়ে থাকেন। আজকের আগুনে এমন বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্ন মাটি হতে চলেছে।
নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় রূপালী ফ্যাশন ৩০৪ নম্বর দোকানটির সত্ত্বাধিকারী দাবি করে এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকালে হঠাৎ ফোন পেয়ে দৌঁড়ে এসেছি। ভেতরে তো যাইতে পারতেছি না, বাইরে থেকে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুন দেখার উপায় নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।’
সুলতান ফ্যাশন নামের এক দোকানের ব্যবসায়ী পরিবারের নারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকালই দুই লাখ টাকার মাল ওঠানো হয়েছে। কিস্তিতে টাকা নেয়া, প্রতি সপ্তাহে আড়াই হাজার টাকা কিস্তি। আমার বাচ্চারা কী করবে। দুইটা এতিম ছেলে কীভাবে চলবে এখন।’
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ৫টা ৪৩ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর এক এক করে এখন পর্যন্ত ২৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তৎপরতা শুরু করেছে।