বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানের থানচি-লিক্রি সড়কের ২০ কিলোমিটার এলাকায় শ্রমিকবাহী দুটি ট্রাকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে কেএনএফ(কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট)। এতে এক ট্রাকচালক গুলিবিদ্ধ ও অপর এক শ্রমিক আহত হয়েছে।এছাড়াও ৫ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। শনিবার (১১মার্চ) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সড়কের ২০ কিলোমিটার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ট্রাকদুটি সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য ইট নিতে ৪০ কিঃমিঃ এলাকা থেকে থানচি আসার পথে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হল- ট্রাকচালক মো. জালাল উদ্দিন (২৭) ও ইট ভাটার শ্রমিক মো. রুবেল (২৯)। এদের প্রথমে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে অবস্থার অবনতি হলে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহত দুজনের বাড়ি বান্দরবান শহরের বালাঘাটা এলাকায়। থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক জানান, আহত ট্রাকচালকের গায়ে বেশ কয়েকটি গুলি লেগেছে। কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর সশস্ত্র সদস্যরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ঘটনার পর সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ আনুমানিক বেলা ১১ টায় বলিপাড়া বিজিবি জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল খন্দকার মোঃ শরীফ উল আলম, পিএসসি এর নেতৃত্বে একটি টহল দল বংকুপাড়া বিওপি থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে কিছু কেএনএফ(কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) সদস্যকে দেখতে পায়। একই এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনষ্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (১৬ ইসিবি) এর সেনাসদস্যরা বাংলাদেশ -মায়ানমার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেনা সদস্য এবং বিজিবি টহলদলকে দেখে কেএনএফ সদস্যরা জঙ্গলে অবস্থান নেয় এবং চার রাউন্ড গুলি করে।আনুমানিক দুপুর দেড় টায় সেনাবাহিনী ও বিজেবি সদস্যরা সাদা পতাকা দেখানোর মাধ্যমে কে এনএফ সদস্যদের আলোচনার আহ্বান জানায়। সাদা পতাকা দেখেও কেএনএফ সদস্যরা পুনরায় আরও ১০ রাউন্ড গুলি চালায়। অনাকাঙ্ক্ষিত হতাহত হওয়ার সম্ভাবনা মনে করে বিজিবি টহল দল ও সেনাসদস্যরা উক্ত স্থান ত্যাগ করে ক্যাম্প এলাকায় ফেরত আসে। পরবর্তীতে বিকেল সাড়ে ৩ টায় বাকলাই পাড়ার নিকটবর্তী একটি স্থানে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কিছু বেসামরিক শ্রমিক ও ঠিকাদারের গাড়ি বহরের উপর উপর কেএনএফ এর সশস্ত্র সদস্যরা গুলি বর্ষণ করে। এতে গাড়িচালক মোহাম্মদ জালাল গুলিবিদ্ধ ও একজন শ্রমিক আহত হন। এছাড়াও পাঁচজন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। এলাকাবাসী জানান, পাঁচজন শ্রমিক ছাড়াও এই দলে চারজন ঠিকাদার ছিলেন তারাও নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথ অভিযানে নেমেছে। উদ্ধার অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বম,লুসাই, খুমিসহ ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বান্দরবানে গড়ে উঠে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ। এ সংগঠনটির সশস্ত্র শাখা কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি। নতুন গজিয়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্যদের এই সংগঠনটি টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল বলে নিরাপত্তা বাহিনী ও র্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতা দমনে বান্দরবানে গত ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযান চলছে।