দ্বিপক্ষীয় বিদ্যমান অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারতের সহায়তা কামনা করেছে বাংলাদেশ। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুই দেশের ফরেন অফিস কনসালটেশনে এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ বৈঠকের জন্য ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কুমার কাত্রা মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় এসেছেন।

আজ বৈঠকের পরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এ লক্ষে (অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোর সমাধানে) আমরা একযোগে কাজ করার ওপর গুরত্বআরোপ করি। তিস্তাসহ সব আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বন্টনের বিষয়ে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের ওপর গুরত্ব পুনব্যর্ক্ত করি এবং সমাধানের জন্য ভারতের নিবীড় সহযোগিতার প্রত্যাশা করেছি। সেই সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কুশিয়ারা নদীর পানি বন্টন নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কাযক্রম নিতে ভারতকে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা করছি। তাদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যে সমস্যা আছে, সেটি বিদ্যমান রয়েছে। এরপরেও আমাদের যে আবেদন সেটার বিষয়ে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’

২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, গঙ্গা চুক্তির নবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওরাও হয়তো করছে। আগামীতে দুইপক্ষ হয়তো প্রাক-চুক্তি পর্যালোচনার জন্য বসবে।

সীমান্ত হত্যা

সীমান্ত হত্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে এবং এটিকে শূন্যে নামিয়ে আনতে দুইপক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই তথ্য জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এ লক্ষ্যে ভারত সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। আন্তঃসীমান্ত অপরাধসহ সীমান্তে অপরাধমূলক কাযক্রম নিয়ন্ত্রণে আমাদের চলমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।

মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। এ বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ভারত অনুরোধ করেছে এবং আমরা সাড়া দিয়েছি।’

গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষের যে উন্নয়ন কার্যক্রম ও ত্রিপুরায় যে কাঁটাতারের বেড়ার কাজ কিছুটা বাকি আছে, সে বিষয়ে যে সমঝোতা হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেটা যাতে সমাধান করা যায় সেটির বিষয়ে তারা বসেছিল। আমার ধারণা অচিরেই এই কাজ শুরু হবে।’

বাণিজ্য

ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে যেসব ট্র্যারিফ বা বাধা আছে সেগুলো দূর করার ওপর গুরত্ব আরোপ করেছে ঢাকা।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছি। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে যে কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট বা সেফা সেটা সম্পাদনের জন্য আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। আর ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক পযায়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টা এবং কাযক্রম বেগবান করতেও আমরা একমত হয়েছি।

বিদ্যুৎ সহযোগিতা

বর্তমানে ভারতের সঙ্গে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত থেকে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি আগামী দিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলেও আমরা আশা করছি। চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহে আমি গুরত্ব আরোপ করেছি। ভারত থেকে জ্বালানি আমদানি করতে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্যোগের বিষয়েও আলোচনা করেছি। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়েও ভারতের সহযোগিতা চেয়েছি।

তিনি বলেন, ভারত আশ্বস্ত করেছে নেপাল ও ভূটান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ আনার যে বিষয়টি রয়েছে সেটির বিষয়ে আমাদের নির্দিষ্ট প্রকল্প নেওয়া হলে তারা সাহায্য করবে। তারা এবিষয়ে সাহায্য করবে বলেছে। নেপালের পানি মন্ত্রী দিল্লিতে যাচ্ছেন। সেখানে আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, আদানি গ্রুপের বিষয়ে আলাদাভাবে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য যে সহযোগিতা যেমন পাইপলাইন বা ট্রান্সমিশন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা একটি অনুরোধ রয়েছে, তাদের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে বিদ্যুৎ নেবে। এ বিষয়ে আমরা কিছু কাজ করেছি। সেগুলো আমি তাকে অবহিত করেছি।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইনের সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। বিদ্যুৎ সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে আসলেও সেটিকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কাজ করতে হবে। সঞ্চালন লাইনের সমস্যার কথা আমরা শুনলাম। এখন লাইনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানাবো। এটি যদি দ্রুত করা যায় তবে বিদ্যুৎ যখন আমাদের দ্বারপ্রান্তে আসবে তখন এটি গ্রহণ করা যাবে বলে তিনি জানান।