বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আরও ৫ জন প্রশিক্ষণরত জঙ্গি সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিরা হলেন, নোয়াখালী জেলার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নিজামুদ্দিন হিরন ওরফে ইউসুফ (৩০), কুমিল্লা জেলার আঃ রাজ্জাকের ছেলে সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা(২৭), মৃত.শফিকুল ইসলামের ছেলে মো.বাইজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াজ ওরফে বাইরু (২১),মো. মজিবুর রহমানের ছেলে ইমরান বিন রহমান শিথিল ওরফে বিল্লাল (১৭) ও সিলেট জেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো.সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন(৩০)। বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবানের র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেন র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।তিনি বলেন, র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে।এযাবত প্রায় ৫ হাজার জঙ্গিকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র্যাব সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা বিফল করে দিয়েছে। জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়তে এবং জনসম্পৃক্ততা অর্জনেও র্যাব ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। র্যাব ফোর্সেস গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে অদ্যাবধি বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ জন তরুণের মধ্যে ৩ জনসহ নুতন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩১ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সক্রিয় সদস্য এবং ২০২১ সাল থেকে এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা প্রদান এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট(কেএনএফ) এর ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনটির আমির মোঃ আনিসুর রহমান মাহমুদ নামক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে।এছাড়াও নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর তত্ত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠনটি কুকিচীন এর সাথে মোটা অংকের টাকা ও কুকিচীন সদস্যদের বছরব্যাপী খাবার যোগানসহ বিভিন্ন শর্তে দুপক্ষের মধ্েয চুক্তি হয়। এই তথ্য প্রাপ্তির পর বিভিন্ন সরকারী সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় র্যাব ফোর্সেস নব্য জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণরত ৫৫ জন জঙ্গি এবং তাদের প্রশ্রয় প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে বান্দরবানে অভিযান শুরু করে যাহা এখনো চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ রাতে র্যাব ফোর্সেস এর গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৭ এর অভিযানে বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকা হতে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জন জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও গত ২০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সীমান্তের সাইজাম পাড়া থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অস্ত্র,গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে, কুকিচীন এর প্রধান নাথান বম,কথিত সামরিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম, কথিত লেঃ কর্ণেল সলোমন,কথিত লেঃ কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত লেঃ কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময়সহ অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের নির্দেশনায় কেএনএফ সদস্যরা পাহাড়ে অবস্থানরত জঙ্গিদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সহায়তা করছে এবং অদ্যাবধি জঙ্গিদেরকে প্রশিক্ষণ,খাবার সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও রসদ সরবরাহ করে যাচ্ছে। তবে র্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং গ্রেপতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
###