রাস্তার মোড়ে ছেঁড়া জুতা সেলাই করছেন মধ্য বয়সী এক নারী। জুতা জোড়া বা সেলাই করে মজুরি পাবেন ১৫ টাকা। সেলাই-কালি (রং) করে হাটের দিন আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। হাট ছাড়া ৫০ টাকাও আয় হয় না। থাকেন ভাড়া বাড়িতে। এ আয় দিয়েই চলে তাঁর সংসার। তাঁর কিশোর ছেলে সবেমাত্র নরসুন্দরের কাজ শিখছে। খেয়ে না-খেয়ে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ৮ বছর ধরে তিনি মুচির কাজ করছেন। সংগ্রামী ঐ নারীর নাম শেফালি দাস। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং প্রয়াত রমেশ দাসের স্ত্রী। তাঁর স্বামী ঠাকুরগাঁও সদরের রায়পুর ইউনিয়নের ভাউলার হাটের একটি মোড়ে মুচির কাজ করতেন। সেখানেই এখন বসেন তিনি। সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার বসে হাট। ১১ নভেম্বর শুক্রবার হাটে শেফালি দাসের কথা হয় সাংবাদিক মো. মজিবর রহমান শেখ এর সাথে । শেফালি বলেন, ৮ বছর আগে আকস্মিক তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। হঠাৎ পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখতে থাকেন শেফালি। ক্ষুধার তাড়নায় স্বামীর রেখে যাওয়া মুচির কাজই শুরু করেন। প্রথমে তেমন কাজ না পারলেও পরে শিখে নেন। যা আয় হতো তা দিয়ে ৪ জনের সংসারে কোনো দিন এক বেলা, আবার কোনো দিন দুই বেলা ভর্তা-ভাত খেতে পারতেন। আমিষ তো বছরেও মুখে ওঠেনি। ১৪ বছরের ছেলে দীপুকে শেখাচ্ছেন স্যালুনের কাজ। বছরখানেক ধরে শেফালির আয় কমে গেছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। ‘স্বামীর মৃত্যুর পর মনে হচ্ছিল ভিক্ষা করব। পরে চিন্তা করি সৃষ্টিকর্তা সুস্থ শরীর ও ভালো দুটি হাত দিয়েছেন। পরিশ্রম করে খাব, সে কারণে স্বামীর ফেলে যাওয়া পেশাকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিই।’ বলছিলেন শেফালি দাস। এলাকার ভোটার হলেও বিধবা ভাতা পাননি শেফালি। জোটেনি আশ্রয়ণের ঘরও। ভাতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলেও কাজ হয়নি। এখন তাঁর শরীর আগের মতো নেই। এ কারণে দিন দিন চিন্তা বাড়ছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকারি ভাতা পাব কিনা জানি না। মরার আগে যদি ছেলেকে নিজস্ব জায়গাতে রেখে যেতে পারতাম তা হলে মরেও শান্তি পেতাম।’ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, শেফালির বিষয়ে জানা ছিল না। আবেদন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁর বিধবা ভাতা সহ সরকারি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হবে।