বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত নদীমাতৃক ও গরিবখ্যাত এলাকার নাম কুড়িগ্রাম জেলা। যদিও এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে শিক্ষা ও উন্নয়নে যথেষ্ট পরিবর্তন লক্ষণীয়। সেই পরিবর্তনের ধারায় বিশেষ করে শিক্ষায় নাম উঠে আসছে জেলার উলিপুর উপজেলার বাবুরহাট মজিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির। যে সকল বৈশিষ্ট্যে নিভৃতপল্লীর ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে সর্বাধুনিক ও যথাউপযোগি শ্রেষ্ঠতার দাবি করে তার খোঁজে বা অনুসন্ধানে যে সকল তথ্য মিললো বাস্তবতায়। সরেজমিনে প্রাপ্ততথ্যে জানাগেছে, স্কুলগামি কোমলমতি শিশুদের আকৃষ্ট করে শিশুবান্ধব চিত্র, পরিবেশ ও সাজে শিক্ষাদানের প্রত্যয়ে নিভৃতপল্লীর কোলে অনন্য শোভাবর্ধক শিশুপার্ক আদলে বাবুরহাট মজিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উপজেলা শহর থেকে বজরা অভিমূখে ১০কিঃমিঃ গেলেই চোখ কাড়ে যে কারও। ১৯৯০ইং সালে এ স্কুলটির যাত্রা শুরু করে ৩৩ শতাংশ জায়গার উপর। জায়গাটি দান করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মজিদিয়া বেগম নামের দানবীর এক নারী।রেজিস্ট্রেশন ও এমপিওভুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতিষ্ঠাকালীন ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক মজিদিয়া বেগমের পুত্র সরোয়ার উদ্দীন মন্ডল। শিক্ষানুরাগী ঐ প্রধান শিক্ষক আপন মননে এলাকার অন্যান্য মনবল মানুষের সহায়তায় এলাকার শিশুদের গড়তে নিরলস প্রচেষ্টায় থাকতেন।২০১৩ইং সালের ৯জানুয়ারীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সাহসি ঘোষনায় ২৬,১৯৩টি রেজিষ্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের তালিকাভুক্তর সময় যুক্ত হয় ঐ প্রতিষ্ঠানটিও। এরপর প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক মান আরও একধাপ এগিয়ে যায়। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীকেসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সকলকে কৃতজ্ঞতাভরে মনে রেখেছেন।তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার ছিলেন এ.কে.এম তৌফিকুর রহমান। বর্তমানে তিনি জেলার সহকারি শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি তখন হতে বর্তমান অবধি শিশুদের জন্য খেলনা সামগ্রীসহ আগ্রহী করনে নানা উপকরণ ,কৌশল যোগ করতে থাকেন। তৎকালীন উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সফিকুল ইসলামের প্রস্তাবনা ছিল শহর পর্যায়ের অনেক সরকারি-বেসরকারি স্কুলতো বেশ সাজানো গোছানো ও সুপরিকল্পিত।গ্রাম পর্যায়ে শিশুবান্ধব নান্দনিকতার গুরুত্বসহকারে ভাবতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহবান করেন। সেই আহবান ভাবনায় ও প্রেরণায় বাবুরহাট মজিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে ৩৭ ক্লাসটারের অন্যতম হিসেবে বেছে নেন সকলেই।দ্বার করানো হয় শ্লোগান “বিদ্যালয় হবে নন্দকপার্ক-শিখবে শিশু শতভাগ” এরপর স্কুলফিডিং কার্যক্রমে ফিল্ড মনিটরদের পর্যবেক্ষনে জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় ২০১৮ইং নির্বাচনে অত্র বিদ্যালয়টির অন্যতম এক সাফল্যগাঁথা কর্মকান্ড উঠে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টিফিনবক্স প্রদান, বিস্কুট বিতরণ, কাবদল স্টুডেন্স কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ ও ক্ষুদে ডাক্তার টিমের নিয়মিত মোহড়ার কার্যক্রম।অন্যদিকে,জেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগনের সার্বিক তদারকি, যুক্ত থাকেন এলাকাবাসীও, অভিভাবক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণও।উপজেলা নির্বাহী অফিসার সফিকুল ইসলাম তাঁর বিদায়লগ্নে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে একসেট বাদ্যযন্ত্র প্রদান করে প্রতিষ্ঠানের সাফেল্যে নিজেকে যুক্ত করেন।২০১৯ই সালে বৈদ্যূতিক ঘন্টার ব্যবস্থা। পুরো বিদ্যালয় ও শ্রেণীকক্ষের পাঠদান পর্যবেক্ষণে সিসি ক্যামেরার স্থাপন।২৪ঘন্টা বৈদ্যূতিক ব্যবস্থায় জেনারেটর স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং ইক্যুয়েপমেন্ট ব্যবস্থা, একটিভ মাদার্স ফোরামও বিদ্যমান থাকে।অমনোযোগি, অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং, বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের যথাযথ ইতিহাসের গল্প শোনানো, শতভাগ শিক্ষার্থীর পঠন দক্ষতা অর্জন, প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে বুককর্ণার স্থাপন, শিক্ষক স্বল্পতার কারনে মাল্টিটমিডিয়ায় প্রজেক্টারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জয়ফুল লানিং নিশ্চিতকরণ, বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকাবেদির মাধ্যমে বিদ্যালয়টিতে ছাদকৃষি ও সবজিবাগান,ফুলের শোভাবর্ধন করে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সহযোগিতায় সঙ্গীত শিক্ষার চর্চাও চলে। য এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ের ঐ প্রতিষ্ঠানটিতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন, পিটিএ রেজিষ্ট্রেশন সম্পাদন, গুণীজনের কর্ণার স্থাপন ও সর্বোপরি বাংলাদেশের ইতিহাসের সুর্য্য হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বীর সর্দার মুজিববর্ষ ২০২০ইং মিলে অত্র প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা সকলেই নিজেদের সংশ্লিষ্টতার দাবি করে গর্ববোধ করায় সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে দূর বহুদূর।উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, আমরা করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে থাকি। যার বাস্তবায়নের মূল ভূমিকায় ও অবদানের কৃতিত্ব এটিও ফরহাদ সাহেবের।পর্যায়ক্রমে অন্যান্যগুলোকেও আধুনিকায়নের আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।প্রধান শিক্ষক সরোয়ার হোসেন মন্ডল বলেন-আমার ধ্যান কেবল শিশুদের মানুষ হবার রাস্তায় তুলে দেয়া। আর আমার এ অনুপ্রেরণার উৎস-সহকারি শিক্ষা অফিসার ফরহাদ স্যার।উলিপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা উম্মে হাবিবা পলি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুলটির অবস্থান হয়েও যে পরিসরে সুনাম কুড়িয়েছে।উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার ফরহাদ হোসেন বলেন, ২০১৭ইং সালের ২৩এপ্রিল এখানে যোগদান করি। আমি আমার চাকুরির দায়িত্বের পালনের সাথে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মজবুত ভিত গড়তে দিতে চাই।সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ক্লাসটারের সকল শিক্ষক,শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানের সচেতন প্রতিবেশি মানুষদের সমন্বিত করি।কোন কৃতিত্ব আমার একার নয়, সংশ্লিষ্ট সকলের। সফলতার কৌশলগুলো ব্যবহার করলে সময়, পরিশ্রম কমবে আর বাড়বে যথাযথ শিক্ষার মান।বাংলাদেশের জন্য সুস্থ, স্বচ্ছ শিক্ষার মজবুত ভিতের আগামী যথাসম্ভব বাড়ুক। তবে দূর্ণীতি হবে নিরুদ্দেশ প্রকৃত পরিচ্ছন্ন হবে বাংলাদেশ