২০২০ সালে এই দিনে বুড়িগঙ্গায় ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। এতে মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রী মারা যায়। তাদের মধ্যে ছিলেন ফল বিক্রেতা সাইদুল। স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জে বাস করতেন তিনি। ওই দিন লঞ্চে করে ঢাকায় আসছিলেন ফল কিনতে। কিন্তু আর ফিরতে পারেননি তিনি। তাকে হারিয়ে দুই ছেলে নিয়ে বিপদে আছেন স্ত্রী নুরজাহান।
সাইদুলের স্ত্রী বলেন, ওদের বাবা যখন বেঁচে ছিল তখন তো বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয়নি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সে নাই, এখন সংসার চালাতে অন্যের বাসায় কাজ করতে হয়। দুই বাসায় কাজ করে ১৫০০ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দুই ছেলে নিয়ে বেঁচে আছি।
তিনি বলেন, ‘আগে তো সংসার চালানোর দায়িত্ব ছিলো ওদের বাবার ওপর। উনি মারা যাওয়ার পর কে দেখবে আমাদের। আমি অসুস্থ। দুই বার বুকে টিউমারের অপারেশন করিয়েছি। বেশি কাজ করতে পারি না। তাই দুই বাসায় কাজ করি। অনেক কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে কেউ খুশি হয়ে দান খয়রাতও করে। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।’
তিনি বলেন, ‘বড় ছেলে সাজিম আগামীবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। অনেক কষ্ট করে ছেলেটার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। টাকার অভাবে যেকোনো সময় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর ছোট ছেলে সামিকে টাকার অভাবে পড়াতে পারি না। মা, বোনদের সাথে কাঠপট্টিতে ভাড়া থাকি। কীভাবে যে এই সংসার চালাবো তাই ভাবি।
সাইদুলের বোন শিউলি আক্তার বলেন, ‘ভাইকে হারিয়ে দুই ছেলে নিয়ে আমার ভাবি খুব কষ্টে আছে। কেউ যদি আমার ভাইয়ের ছেলে দুটোর দায়িত্ব নিতো।’
২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এরপর মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পরের দিন ৩০ জুন রাতে নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার এসআই মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এখন পর্যন্ত ৫১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।