এ বছরই ফিলিস্তিনে নির্বাচন হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ২০০৫ সালে ৪ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহমুদ আব্বাস। তবে এরপর ১৫ বছর ধরে তিনিই ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট রয়ে গেছেন। এর আগেও একাধিকবার নির্বাচনের আশ্বাস দেয়া হয়েছে কিন্তু তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি বেড়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ববাদ। তাই এবারও নির্বাচন হবে এমন ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কখনই গণতান্ত্রিক চর্চায় আগ্রহী ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, এখন কেন হঠাৎ করে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হলো আব্বাসকে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সময় দেশটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ফান্ডিং বাতিল করেছে।
এরপর গত ৩রা নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে জয় পান জো বাইডেন। তখন থেকেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আবারো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক দৃষ্টির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। স্পষ্টভাবেই হঠাৎ করে ফিলিস্তিনে নির্বাচন ঘোষণা করা ওই চেষ্টার একটি অংশ। তবে বাইডেন প্রশাসনকে মুগ্ধ করার চেষ্টাই এ পদক্ষেপের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। এর পেছনে কাজ করছে একাধিক আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়।
যাইহোক এখন পর্যন্ত আমরা জানি, আগামী ২২শে মে সেখানে লেজিসলেটিভ নির্বাচন এবং ৩১শে জুলাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যদিও এই তারিখ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো তার পেছনে হামাস কিংবা ইসরাইলকেও দোষী করা হতে পারে। এছাড়াও, জেরুজালেম নিয়ে একটি বড় বাধা রয়েছে। এর আগে আব্বাসসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যতদিন না জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিরা ভোট দিতে না পারছে ততদিন তারা নির্বাচন ঘোষণা করবে না। কিন্তু ইসরাইল সরকার জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিদের ভোট দিতে দেবে সে রকমটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি করার অর্থ হচ্ছে, জেরুজালেমে থাকা ফিলিস্তিনিদের আইনগতভাবে ফিলিস্তিনি হিসেবে মেনে নেয়া। একইসঙ্গে এরমধ্য দিয়ে সমগ্র জেরুজালেমের ওপর ইসরাইলের যে দাবি তাও হুমকির মুখে পড়বে। এ ঝুঁকি ইসরাইল কেন নিতে যাবে? তাই বরঞ্চ এমনটা হতে পারে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ উল্টো হুমকি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখবে।
জেরুজালেমকে বাদ দিয়েও যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশ্লেষকদের। গাজায় হামাস ও পশ্চিমতীরে ফাতাহর জনসমর্থন কমে আসছে। জনগণকে দেখানোর জন্য তাদের কাছে কোনো জনপ্রিয় ইস্যু নেই। কর্তৃত্ববাদ ও দুর্নীতি ছাড়া এই অঞ্চলসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। আবার উভয় স্থানেই তাদেরকে কেউ চ্যালেঞ্জ করবে সেই সুযোগ নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। তাদের দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদ নিয়ে প্রশ্ন তুললেই নেমে আসছে নির্যাতন। সব মিলিয়ে ফিলিস্তিনের উভয় অংশেই একটি একদলীয় ব্যবস্থা চালু রয়েছে এবং ফিলিস্তিনিরা ক্রমশ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফিলিস্তিনে একটি নির্বাচন হচ্ছে নিছকই কিছু আনুষ্ঠানিকতা। এর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অনেক স্বৈরতন্ত্রেও নিয়মিতভাবে নির্বাচন আয়োজিত হতে দেখা যায়। ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রেও সেরকম নামমাত্র নির্বাচন দারুণ কিছু বয়ে আনবে না। যে সিস্টেমে গণতন্ত্র চর্চা এবং গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব তৈরি করার সুযোগ নেই সেখানে শুধু নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।