মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস সারাদেশে যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তখন কক্সবাজার জেলার শান্তিপ্রিয় অথচ বিপ্লবী মানুষেরাও রক্ষা পায়নি।টেকনাফে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক বধ্যভূমি। সংস্কার ও সংরক্ষণে অবহেলার কারণে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে এই বধ্যভূমিগুলো। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পা রাখলে ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি কোন সরকার। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সংরক্ষণের কথা দিলে ও আজও উদ্যোগ নেয়নি কেউ। ফলে শহীদ বধ্যভূমিটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। হারিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন সেই সব শহীদদের স্মৃতির শেষ চিহ্ন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের মুষ্টিমেয় সহযোগী ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জয় হয়েছিল। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের পর সেদিন মানুষ হাঁফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিয়েছিল তারা। যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন-স্বজনদের জন্যে কেঁদেছিল চিৎকার করে। কারণ যুদ্ধের নয় মাস তো তাদের কান্না করারও অধিকার ছিলো না। জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাক বাহিনীর হাতে বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতনে নিহত হন টেকনাফের অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ। পাক বাহিনীর হাতে হত্যার পর মরদেহ পুঁতে রাখা হয়েছিল সেখানে। স্বাধীনতার ১০ বছর পর ১৯৮১ সালে টেকনাফ পৌরসভার অলিয়াবাদ বিত্তহীন সমবায় সমিতির উদ্যোগে বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বধ্যভূমিতে পাকা স্তম্ভ চারপাশে পাকা দেয়াল নির্মাণসহ ৩টি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। যা এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে অনেকটা ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাবত অবহেলায় পড়ে আছে টেকনাফের অরক্ষিত শহীদ বধ্যভূমিটি। সেখানে পাশে রয়েছে সুপারি ব্যবসায়ীদের সুপারি, চা,পান, বাদাম বিক্রেতাদের দোকান। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে কালিন সময় নিহতদের স্মৃতিবিজড়িত খবর স্থানটি সংরক্ষণ না করায় নতুন প্রজন্মের কাছে অগোচরেই রয়ে গেছে এ অঞ্চলের শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস একমাত্র। সুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন বিজয় সিংয়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী টেকনাফে আসার পরবর্তী মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ঐতিহাসিক এই বধ্যভূমিটি আবিষ্কার করেন। এখান থেকেই ২৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ উদ্ধার করে বর্তমান টেকনাফ পৌর কবরস্থান সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে সমাহিত করা হয়েছিল। এই বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এই বধ্যভূমির জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কাজ চলছে বলে জানান। জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সেক্রেটারি কমরেড গিয়াস উদ্দীন জানান, কক্সবাজার জেলায় ৮ টি ইউনিয়নে যতগুলো শহিদদের অরক্ষিত কবর আছে আমরা এই ব্যাপাররে সরকারি দায়িত্ব শীল কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা আমাদেরকে এই সব বধ্যভূমি দ্রুত সংরক্ষণের উদ্যোগ নিবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু আজও উদ্যোগ নেয়নি কেউ। আগামী নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।