প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। এখন চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি। তাই এখন আমরা মানসম্মত বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছি।
শনিবার ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘বিজয়ের ৫০ বছর ও বিদ্যুৎ খাতের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তুপের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যাত্রা শুরু করেন। রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুনর্বাসন শুরু করেন। স্বাধীনতার আগে যে বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা ছিল এবং বিতরণ ব্যবস্থা যা ছিল সেটাকে পুনর্বাসন করেন। গ্যাস ক্ষেত্রগুলোও কিনেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৯৬ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখন সমস্ত বিদেশি ও মাল্টি ন্যাশনাল সংগঠনগুলো এক পয়সাও বাংলাদেশকে দিত না। তারা বলতো যে, তোমাদের সিস্টেম লস বেশি, তোমাদের কোনো জেনারেশনে কিছু দেওয়া হবে না। তখন প্রধানমন্ত্রীর সংকল্পের ওপর ভিত্তি করে আমরা প্রাইভেট ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার জেনারেশন পলিসি করেছি। সেই পলিসি করে আমরা ভালো রেসপন্স পেলাম। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, খুলনা, হরিপুরে বার্জে করে পাওয়ার প্লান্ট এনে স্থাপন করা হলো। এরপর ক্যাপটিভ পাওয়ার পলিসি করা হলো। যদি ক্যাপটিভ তার উদ্বৃত্ত বিক্রি করতে চায় তার ব্যবস্থা করা হলো। এভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি পরিবর্তন করা হয়। তখন কিন্তু সরকারের মধ্যেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। প্রধানমন্ত্রী তখন সাহসী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ২০০৯ সালে দেখলাম বিশ্বব্যাংকের ফরমুলায় করা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনে দ্রুত কাজ করা সম্ভব না। ফিলিপাইন তখন একটি নির্বাহী আদেশে কাজ করছিল। তখন আমরা বিশেষ আইন করলাম, অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি অনেক, বিরোধীদল কিংবা মিডিয়াকে খুশি করা না, সাধারণ মানুষকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়। আমেরিকায় অর্জন হলে প্রেসিডেন্টের কথা আসে। বাংলাদেশে প্রথম আসে নেতৃত্বের কথা। ভবিষ্যতে এনার্জি এফিশিয়েন্সির দিকে যেতে হবে। কিভাবে ভবন এনার্জি সাশ্রয়ী করা যায় সেদিকে যেতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন শহরের বিদ্যুৎ, গ্রামকেও বিদ্যুতায়িত করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদে উলে্লখ করা আছে সকলের জন্য বিদ্যুৎ দিতে হবে। এ বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যাত্রা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। জামায়াত-বিএনপি সরকার বাংলাদেশকে ৫০ বছর পেছনে ঠেলে দিয়েছে। কিভাবে দেশের উন্নয়ন করবে তার কোনো প্লান ছিল না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসলেন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশকে যদি সোনার বাংলাদেশ গড়তে হয় তার মূল চালিকাশক্তি হবে এনার্জি বা বিদ্যুৎ। তাই এই জায়গাটিতে বেশি নজর দিতে হবে। জামাত-বিএনপি জোট সরকার ১৯৯৬ সালের আগে যে ভঙ্গুর অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন, তখন আবার ঘুরে দাঁড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ সরকার মোকাবিলা করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ফের ক্ষমতায় এসে বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিকল্পনাসহ বন্ধ করে দেয়। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৯ সালে সারা দেশে আলোকিত করার কথা বলা হলো ইশতেহারে। তখন টাকশালে টাকা নেই, তেল কেনার পয়সা নেই। ওই সময় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। একটি আইন এই জায়গাটিকে পরিবর্তনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। সাহস করে যে পরিবর্তন করা যায়, তখন সেই সাহসটি দেখিয়েছেন। অনেকে সমালোচনা করেন বিশেষ আইন নিয়ে। এই বিশেষ আইন করার সুফল আজকে পাচ্ছি। অনেকে লিকুইড ফুয়েল, রেন্টাল নিয়ে কথা বলেন। তাদের ধারণাই নেই, এগুলো না হলে আজকের ভালো অবস্থায় আসা সম্ভব হতো না। পৃথিবীতে এই ধরনের কেসস্ট্যাডি খুবই বিরল। আমার কাছে মাঝে মাঝে আশ্চর্যজনক মনে হয়। ২০১৪ সালে যখন আমাকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়, তখন অনেকে তদবির করতেন বিদ্যুতের জন্য, সত্যি বলতে কি আমি কিছুটা হলেও নার্ভাস ছিলাম। একদিন প্রধানমন্ত্রী ডেকে পরামর্শ দিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বিদ্যুৎকে গুরুত্ব দিয়েই সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে গ্রামীণ বিদ্যুতের কথা তিনি বলেছেন। মূলত বিদ্যুৎ খাত বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ১৯৭৭ সালে হয়েছে বলে অনেকে মিসকোট করে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে প্রকৌশলীদের সমাবেশে এই সংস্থার বিষয়ে বক্তব্য দেন। তার ধারাবাহিকতায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড স্থাপিত হয়। আমরা শুধু বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াইনি, আমরা এখন সিস্টেম লস সিঙ্গেল ডিজিটে এনেছি। বিদ্যুৎ খাতে একটি দক্ষ টিম কাজ করছে। যার ফলে আজকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ১ কোটি ৮ লাখ সংযোগ। ২০০৯ সালে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৪৯৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা ছিল। এখন ১৪০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্পাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট। প্রধানমন্ত্রী সর্বত্র একই মূল্যে বিদ্যুৎ বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিপপার সভাপতি ইমরান করিম ও সিআরআই পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। এফইআরবি চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফইআরবি নির্বাহী পরিচালক শামীম জাহাঙ্গীর।