লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ঘরে ঢুকে মুখোশধারীরা মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে রেখে গৃহবধূকে (১৯) ধর্ষণের পর বেদম মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে আটক মিরাজের (২৬) নাম উল্লেখ ও অচেনা আরো তিনজনের নামে মামলা দায়ের করেন।মিরাজের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে জেলা আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ওসি। এদিকে খবর পেয়ে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিমতানুর রহমান সদর হাসপাতালে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলেন।ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় পান খেতে গিয়ে মিরাজের মুখোশ খুলে যায়। এতে গৃহবধূ তাকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে, তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।
থানা পুলিশ ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মামলার প্রধান অভিযুক্ত মিরাজ হোসেনসহ ৪ যুবক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। মিরাজ চর নেয়ামত গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর নেয়ামত গ্রামে গৃহবধূর বাবার বাড়িতে ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়।স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, রাতে খাবার শেষে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরাসহ ওই গৃহবধূ ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ গভীর রাতে একদল মুখোশধারী লোক দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে। এরপর তারা পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূকে তিনজন জোরপূর্বক ধরে রাখে। অপরজন ধর্ষণ করে।
তাদের মধ্যে একজন পান খাওয়ার সময় মুখোশ খুলে যায়। ওই যুবক মিরাজ বলে গৃহবধূ চিনে ফেলেন। এক পর্যায়ে গৃহবধূকে বেদম মারধর করে ঘরে থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ জিনিসপত্র নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে গৃহবধূসহ পরিবারের লোকজনকে উদ্ধার করে। ভুক্তভোগীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।গৃহবধূর এক নিকটাত্মীয় জানিয়েছে, এক বছর আগে উপজেলার চর হাসান হোসেন এলাকায় তার বিয়ে হয়েছে। তিনি (গৃহবধূ) কয়েকদিন আগে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। এমন ঘটনা তারা কল্পনাও করতে পারেনি।
নির্যাতনের শিকার নারীর বরাত দিয়ে থানা পুলিশ জানায়, ঘরে ঢোকা চারজনই মুখোশ পরা ছিল। ঘটনার সময় একজনের মুখোশ খুলে গেলে তাকে চিনে ফেলেন। তিনি মিরাজ বলেন নিশ্চিতি করা হয়। মিরাজ সম্পর্কে ওই নারীর ভাইয়ের মামা শ্বশুর। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মিরাজদের সঙ্গে তাদের (নারীর ভাই) বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরেই মিরাজের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, গৃহবধূকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি শারীরিকভাবেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমাদের তত্ত্বাবধায়নে এখন তার চিকিৎসা চলছে।এ ব্যাপারে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি মিরাজের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে আমরা কাজ করছি।