কিশোরগঞ্জের ইটনায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ গোলাম মোস্তফা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত তার স্ত্রীর নামে খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বসবাস করা ২০টি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছেন প্রভাবশালী গোলাম মোস্তফা।তবে ঘটনা তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটনা উপজেলা সদরের পূর্বগ্রামের নূরপুর এলাকায় সরকারের ৬০ শতাংশ খাস জমিতে ২০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে ২০টি ভূমিহীন পরিবার। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই তারা জানতে পারেন, ওই জমি ইজারা হয়ে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিশোরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ গোলাম মোস্তফা ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারের নামে।
ইজারার কথা জানিয়ে ওই পরিবারগুলোকে মোস্তফা জমি ছেড়ে দিতে বললে বিপাকে পড়েন তারা।এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বসবাসকারী প্রকৃত ভূমিহীনদের বরাদ্দ না দিয়ে সম্পদশালী ও চাকরিজীবী দম্পতির নামে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এ ঘটনায় অভিযোগ করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খাসজমিতে বসবাসরতরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমি ইজারা পাবেন। আর কোনো অবস্থাতেই খাস জমি পেতে পারবেন না সম্পদশালীরা। কিন্তু এক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি।স্থানীয় নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, নূরপুর মৌজার আরএস এক নং খতিয়ানের ৪১৪ দাগের ৬০ শতাংশ ভূমিতে ১৫ বছর ধরে ওই ২০টি পরিবার বসবাস করে আসছে।
ইসমাইল হোসেনের দাবি, খাস হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হওয়ার আগে ওই জমির প্রকৃত মালিক বিপিন চন্দ্র বণিক ও হৃদয় চন্দ্র বণিকের কাছ থেকে মৌখিকভাবে তার বাবা বদর উদ্দিন ওই জমি কিনেছিলেন। আর তার কাছ থেকে কিনে ওই পরিবারগুলো স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কিছুদিন আগে তারা জানতে পারেন, এ ৬০ শতাংশ জমি খাস খতিয়ানভুক্ত এবং এ জমি গোলাম মোস্তফা ও তার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট ইটনা উপজেলার নূরপুর মৌজার আরএস এক খতিয়ানের ৪১৪ দাগের ৬০ শতাংশ জমি ওই দম্পতির নামে বন্দোবস্ত দেয় ভূমি অফিস।ভূমিহীন সেজে খাসজমি বন্দোবস্ত নেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা ও তার স্ত্রীকে এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায়নি।
পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোস্তফা বলেন, ‘আমি যখন স্ত্রীর ওই জমি লিজ আবেদন করি তখন আমার স্ত্রী চাকরি করতেন না। আমিও সরকারি চাকরি করি না। এখন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা তা মেনে নেব।’এদিকে, খাসজমির এই অনৈতিক বন্দোবস্ত বাতিল করে সেখানে বসবাসরতরা প্রকৃত ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য গত ৯ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে গত ২৪ আগস্ট ইটনা উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) চিঠি দেন কিশোরগঞ্জের আরডিসি। তবে তিন মাসেও সে আদেশ পালন করা হয়নি।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসিল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাফিসা আক্তার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার সরকারি নীতিমালা আছে। এ নীতিমালা না মেনে স্থানীয় প্রশাসন কীভাবে ওই জমি বন্দোবস্ত দিল সেটি তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।অনৈতিকভাবে ভূমি বন্দোবস্ত দেয়া হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে বন্দোবস্ত দেয়া জমির দলিল বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি।