সম্প্রতি ধর্ষণ রোধে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে, যা জনমনে স্বস্তি আনলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে রয়ে গেছে সংশয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়তে নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সে আইন যদি প্রয়োগ না করা যায় তাহলে তা নিতান্তই মূল্যহীন। দেশে হত্যাকাণ্ডের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আছে, তবুও মানুষ হরহামেশা খুন হচ্ছে।
এর কারণ সব খুনের বিচার হচ্ছে না; অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা বিভিন্ন উপায়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলেও যদি সব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ না হয়, তাহলে সে আইন থাকা না-থাকা সমান।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার রয়েছে অসংখ্য কারণ। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভুক্তভোগীরা বিচারের জন্য আদালত তো অনেক দূরের কথা, থানা পর্যন্তও যেতে পারছে না। রাজনৈতিক ও ক্ষমতার প্রভাব আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার আরেকটি বড় কারণ।
যখন কোনো অপরাধীর অপকর্ম প্রকাশ হয়, তখন আমরা অপরাধী হিসেবে তার যতখানি পরিচয় খুঁজি তার থেকে বেশি খুঁজি তার রাজনৈতিক পরিচয়, যা অনেক সময় বিচারকার্য সম্পন্ন করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও মামলার তদন্তে অস্বচ্ছতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, পুলিশের অসহযোগিতা, অসাধু আইনজীবীদের পক্ষপাতিত্বও উল্লেখযোগ্য কারণ।
আর এসব কারণে আইনের প্রয়োগ কঠিন হয়ে যায় এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। গত বছরের মে মাসে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাদের অধীনে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের’ আওতায় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ বছরে ২২,৩৮৬ জন নারী ধর্ষণসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, মামলা হয়েছে মাত্র ৫,০০৩টি, রায় ঘোষণা হয়েছে ৮২০টির, শাস্তি হয়েছে ১০১ জনের।
শতকরা হিসাবে রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ শতাংশ এবং সাজা পাওয়ার হার ০.৪৫ শতাংশ। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে গড়ে মাত্র ৪ শতাংশ অপরাধী শাস্তি পায়। এ পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশে যে সংখ্যক নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে সেই সংখ্যক অপরাধীর বিচার হচ্ছে না। ফলে একের পর এক পৈশাচিক ও বর্বর ধর্ষণচিত্র দেখতে হচ্ছে আমাদের।
এ অবস্থায় ধর্ষকের কালো থাবা থেকে নারীদের রক্ষা করতে আইনের প্রয়োগ জরুরি। অপরাধ যেই করুক তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। বিচারিক প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে, যাতে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রতার অবসান হয়। তাছাড়া বিচারব্যবস্থাকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন করতে হবে।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্যও বহুমুখী উদ্যোগ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত হলেই নারীরা তাদের স্বাধীনতা ফিরে পাবে এবং দেশ ও জাতি গড়ায় ঈর্ষণীয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
মুহম্মদ সজীব প্রধান : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ