কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে গত ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) দেশে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছে। এ সময় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ ৪২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে।
এরমধ্যে করোনা ধাক্কার প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এসেছে ২৮৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দাতাদের কাছে সরকার করোনা সংকটের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পারায় রেকর্ড পরিমাণ ঋণ-সহায়তা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
সরকার আরও তৎপর হলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য আরও অনুদান বা ঋণ পাওয়া যাবে বলে তারা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৭২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বিদেশি ঋণ এসেছিল। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি এসেছে মহামারীকালের চার মাসের (মার্চ-জুন) মধ্যে।
এই সময় এসেছে ৩৭৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। বাকি ৩৫০ কোটি ৩২ লাখ ডলার এসেছিল আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি)।
গত জুনে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ-সহায়তা দিয়েছে দাতারা। এই সময় এক মাসে ১৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে সর্বোচ্চ ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের ঋণ এসেছিল ২০১৮ সালের জুনে।
গত অর্থবছরের মার্চে ১০১ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ এসেছিল। এপ্রিল ও মে মাসে পায় যথাক্রমে ৩০ কোটি ৬২ লাখ ও ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে কমে ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে আসে। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর সেপ্টেম্বরে এসেছে ৮৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
জানা গেছে, গত অর্থবছর বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১৩০ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সংস্থাটি ৪০ কোটি ডলার দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক করোনা ভ্যাকসিন বাবদ বাংলাদেশের জন্য ৭ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে।
করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত জুনে সরকারকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দিয়েছে ১৩২ কোটি ডলার। এরমধ্যে করোনা সংকট মোকাবেলায় এ পর্যন্ত ৬০ কোটি ৩০ লাখ ডলার দিয়েছে সংস্থাটি।
এ ছাড়া কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এডিবি।
বাকি ঋণ-সহায়তা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জাইকা), এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) এবং অন্যান্য দেশ ও সংস্থা দিয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মহামারীর এই কঠিন সময়ে চিন্তার চেয়েও বেশি বিদেশি ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
দাতাদের কাছে সরকার বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে পেরেছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। কোভিড-১৯ টিকার জন্য আরও কিছু অনুদান বা ঋণ পাওয়া যাবে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গত সপ্তাহে এক সংলাপে বলেন, করোনা মোকাবেলায় ৪শ’ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণ-সহায়তা এসেছে।
যদিও এটি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। বিশেষ করে ভারতের তুলনায়। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই বৈদেশিক সহায়তার প্রভাব কী তা পরিষ্কারভাবে আমরা পাইনি। আগামীতে এটি আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ গত অর্থবছরের শেষ দিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছিল।
সে কারণেই অর্থবছর শেষে সব মিলিয়ে ৭শ’ কোটি ডলারের বেশি ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।