সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে বর্ষায় খাল/বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর নিচু জমি বা খালের পানি অন্য জমিতে স্থানান্তর করে চলছে মাছ ধরার উৎসব। এসব জমি এবং খালের নিচের পানিতে লুকিয়ে থাকা মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে এলাকার শিশুসহ নানা বয়সী নারী ও পুরুষেরা। কার্তিক মাস আসলেই যেন প্রতিটা গ্রামের লোকেরা মেতে ওঠে এ মাছ ধরার উৎসবে। পুকুর-বিল-জলাশয়গুলো থেকে পানি কমতে শুরু করায় পানির ওপরে মাছ ভাসছে আর কিলবিল করছে। রবিবার (২৫ অক্টোবর) মাছ ধরার এমন উৎসবমূখর দৃশ্য দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার হায়দারপুর, চরটেংরাইল সহ আরও কয়েকটি গ্রামে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ২০-২৫ জন নানা বয়সী মানুষ দলবদ্ধভাবে তেলের ইঞ্জিন ব্যবহার করে এক ডোবার পানি অন্য জমিতে স্থানান্তরের পর হাত দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে তারা। টেংরা , পুঁটি, টাকি, শোল, বোয়াল মাছসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরায় ব্যস্ত এসব লোকেরা। উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের বাসিন্দা লেলিন সরকার জানান, গ্রামের সকলকে নিয়ে মাছ ধরতে এসেছি। তবে আগে পানি নামার এমন সময়টাতে নানা প্রজাতির দেশি মাছ ধরা পড়তো কিন্তু এখন আর আগের মত সেসব মাছ নেই। তবে যা পাওয়া যায় সেসবের স্বাদও ভিন্ন। তবে কেনা চাষের মাছের চাইতে বিল-জলাশয়, ক্ষেত, ডোবার তাজা মাছের স্বাদই আলাদা। একই গ্রামের আজিম সরকার জানান, মাছ খাওয়ার চাইতে মাছ ধরার মজাটাই বেশি । গ্রামের সকল বয়সী লোক এক সাথে মাছ ধরার যে কি মজা তা আর বুঝাতে পারবো না। হাটু পর্যন্ত কাদা মাটিতে নেমে শোল, টাকি, শিং মাছ ধরে খুব মজা পেয়েছে। কেউ কাদায় হাত দিয়ে আবার কেউ জাল দিয়ে মাছ, আবার কেউ নানান উপায়ে মাছ ধরছে । রবীন্দ্রনাথ ছোটবেলায় ফেরিওয়ালাকে মাছ বিক্রি করতে দেখেছেন। সে স্মৃতি থেকেই তিনি ‘বালক’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘ফেরিওয়ালা হেঁকে যেত গলির ওপার থেকে/তপ্সিমাছের ঝুড়িখানা গামছা দিয়ে ঢেকে’। সেই গামছা দিয়ে ঢেকে এই কার্তিক মাসেই হাওরের গ্রামে গ্রামে তাজা মাছ মারার ধুম পড়ে। এই মাসেই তাজা সুস্বাদু মাছ দিয়ে তৈরি লাউ শাকের পাতলা ঝোলের সুঘ্রাণে মাতোয়ারা হয় গ্রামবাসি।