দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার খয়েরবাড়ি ও দৌলতপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির জলাবদ্ধতা নিরসন ব্যবস্থা করলেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম। শনিবার (২৪ অক্টোবর) ১২ টায় উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজ হাতে কোদাল নিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক। স্থানীয় কৃষকরা জানান, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ফুলবাড়ির খয়েরবাড়ি-দৌলতপুরসহ আশপাশের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা থাকার কারণে কোন ধরণের চাষাবাদ হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে কৃষকরা দাবি জানিয়ে আসলেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজেই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে মাঠে নেমেছেন।’ দৌলতপুর এলাকায় দীর্ঘ ৫ বছর ধরে জলাবদ্ধতা থাকার কারণে আলম সরকার তার ১ একর জমিতে কোন ধরণের চাষাবাদ করতে পারছিলেন না। আলম সরকার বলেন, “আমার দুই বিঘা জমি পূর্বে থেকেই ছিল। পরে এক বিঘা জমি ক্রয় করেছি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে কোন চাষাবাদ করতে পারছিলাম না! তিনি আরও জানান, মাত্র ৩০০ মিটার একটি ড্রেন না থাকায় হাজার হাজার কৃষকরা তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছিলো না। খয়েরবাড়ি এলাকার মো. জালাল উদ্দিন বলেন, “একটা ড্রেন না থাকায় আমাদের হাজার হাজার বিঘা জমিতে ফসল ফলাতে পারছিলাম না। আমরা এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, এর সাথে যোগাযোগ করেছি জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কিন্তু কোন কাজ হয়নি। সর্বশেষ দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে আজকে নিজেই কোদাল নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দু’একদিনের মধ্যেই এই ড্রেনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমরা আবার জমি গুলোতে ফসল ফলাতে পারব।’ জেলা প্রশাসক এর সাথে সহমত পোষন করে ড্রেন নির্মাণ কাজে এগিয়ে আসেন ফুলবাড়ি উপজেলার শিক্ষক, সুধিজন, কৃষক, কৃষাণী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে খয়েরবাড়ি ও দৌলতপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা থাকার কারণে কয়েক হাজার কৃষক ফসল ফলাতে পারতেন না। বিষয় নিয়ে আমরা উপজেলার প্রতিটি সভায় আলোচনা করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার মহোদয়ও জানেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনিও চেষ্টা করেছেন। আজকে এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজেই এসেছেন। ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। দ্রুতই কাজ শেষ হলে কয়েক হাজার পরিবার উপকৃত হবেন।” এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “ফুলবাড়ি উপজেলার খয়েরবাড়ি ও দৌলতপুর এলাকার প্রায় ২ হাজার একর জমিতে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকার কারণে কৃষকরা ফসল ফলানো থেকে বঞ্চিত ছিল। আমার কাছে বিষয়টি এলাকাবাসী জানালে আমি সরেজিমন পরিদর্শন করি। কয়েক হাজার পরিবার যাতে তাদের কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারে সেজন্য একটি ৩০০ ফিট ড্রেন নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তার প্রেক্ষিতেই আজকে (শনিবার) এলাকাবাসীর সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ড্রেন নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টি আমি নিজেই তদারকি করব। এছাড়াও ড্রেন নির্মাণের ফলে যেসব কৃষিকের ক্ষতি হয়েছে তারাও জমি এবং ফসলের ক্ষতিপূরণ পাবেন।” এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হক সুমন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।