মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরীরে এখনও করোনাভাইরাস থাকলে তার সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নেয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। যদিও এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বিতর্কে যোগ দেয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তার দাবি, তিনি খুব ভালো আছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, তার (ট্রাম্প) যদি এখনও কোভিড থাকে, তাহলে আমাদের মধ্যে বিতর্ক হওয়া উচিত নয়।’ তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজেই একটি টুইট করে বলেন, তিনি ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিয়ামিতে অনুষ্ঠেয় বিতর্কের দিকে তাকিয়ে আছেন। বিতর্কটি দুর্দান্ত হবে বলে তার আশা। একইদিন ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পরবর্তী বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প সশরীরে উপস্থিত থাকবেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের খুব কঠোর নির্দেশিকা অনুসরণ করা উচিত। অনেক মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। এটা একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা।’ বাইডেন বলেছেন, তিনি বিশেষজ্ঞদের নির্দেশিকা অনুযায়ী চলবেন।
এদিকে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পরবর্তী বিতর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক পেন্স ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বিতর্কটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় (স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা) ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের সল্ট লেক সিটিতে প্রথম ও একমাত্র ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ইউনিভার্সিটি অব ইউটাহ এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে বিতর্ক কর্তৃপক্ষ কমিশন অব দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট-সিপিডি। ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, বিতর্কে অংশগ্রহণকারী দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছাড়া সবাইকে বাধ্যতামূলক সার্বক্ষণিক মাস্ক পরা থাকতে হবে। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যদের কাউকে কাউকে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। এমনকি বিতর্ক অনুষ্ঠান শেষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের স্ত্রীরা যখন তাদের অভিনন্দন জানাতে মঞ্চে ওঠেন তখন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের মুখেও মাস্ক ছিল না। এরপর ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হলে ওই ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন রিপাবলিকানরা। এমনিতেই যুত্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারী নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগ নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা করে আসছেন ডেমোক্র্যাটরা।
প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানের দু’দিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চার দিন পর ট্রাম্প হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও হোয়াইট হাউসে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এ অবস্থায় পরবর্তী দুটি বিতর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অসুস্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি পরের বিতর্কগুলোতে সরাসরি অংশ নিতে না পারেন তাহলে ভার্চুয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠানের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী কেবল এই বিতর্কেই পরস্পরের মুখোমুখি হন। ফলে তাদের দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় থাকেন সবাই। বিতর্ক ঘিরে তৈরি হয় নির্বাচনী উৎসব আমেজ। ভোটাররা এই বিতর্কের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, সহনশীলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্যক ধারণা পান। বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি পরস্পরের বক্তব্যের বিরোধিতা করে যুক্তি উপস্থাপন করেন। বিতর্ক শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম জয়-পরাজয় নির্ধারণে জরিপ পরিচালনা করে ফলাফল প্রকাশ করে। এই বিতর্কের ফলাফলের ওপর ভোটারদের প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত অনেকাংশে নির্ভর করে। এটি একটি সাধারণ রেওয়াজ বা প্রক্রিয়া হলেও ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে বিতর্কের ফলাফল ভোটারদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। সেবার তিনটি বিতর্কেই হিলারি জয়ী হওয়ার পরও মূল ভোটের নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পের কাছে হেরে যান।
মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বিতর্কের আয়োজন করে সিপিডি। চার বছর পরপর নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে তিনটি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্বাচনী বিতর্কের আগে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা নজিরবিহীন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসুস্থ হয়ে পড়ায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ও শেষ বিতর্কটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে পরবর্তী বিতর্ক দুটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু জানায়নি সিপিডি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে। বিতর্কে জয়ী হন জো বাইডেন। ১৫ অক্টোবর ফ্লোরিডার মায়ামিতে এবং ২২ অক্টোবর টেনেসির ন্যাশভিলে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে আরও দুটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।