আমাবস্যার কারণে নদীর জোয়ারের পানিতে থই থই করছে খাল বিল। প্রায় প্রতিটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এর ফলে পানির নিচে ডুবে আছে দক্ষিণাঞ্চলের ফসলি জমি এবং সবজির বাগান। এরই প্রভাব পড়েছে বরিশালের কাঁচা বাজারগুলোতে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণের পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণে সকল ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। মাত্র ৩-৪ দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রকারের সাক-সবজিতে ৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। কাঁচা মরিচের দামে করেছে ডাবল সেঞ্চুরী। এমনকি বৃষ্টি আর জোয়ারের কারণে বেড়েছে ইলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশীয় মাছেরও। ফলে ক্রেতাদের মধ্যেও নাভিশ্বাস উঠেছে।
সরেজমিনে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাগেছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২শত টাকা। তবে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা এর দাম হাঁকাচ্ছে ২৫০ টাকা। আবার পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা, কাঁচা কলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ঢেরশ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৪০ টাকা। লাল শাক বিক্রি হয়েছে প্রতি আটি ২০ টাকা করে, এছাড়া পুঁইশাক ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঝিংগা প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। শাপলা প্রতি আটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা প্রতি কেজি, পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে। তবে পেঁয়াজের মূল্য বাড়েনি বলে দাবি বিক্রেতাদের। তাছাড়া গত সপ্তাহের ন্যায় এ সপ্তাহেও প্রতিহালি ডিম ৩৬ থেকে ৩৫ টাকা, দেশী মুরগীর ডিম ৫০ টাকা, হাঁসের ডিমও একই দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা করে। গরুর কলিজা বিক্রি হয়েছে ৫ শত ৮০ টাকায়। ভুরি বিক্রি হয়েছে ২ শত টাকা করে। গরুর মাথা (আস্ত) বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকায়। গরুর ৪ পা বিক্রি হয়েছে ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। ব্রয়লার মুরগী ১২০, সোনালী ২৪০ এবং লেয়ার ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে মাছের দামও অনেকটা বেশি বলে দাবি করেছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। তাদের সাথে আলাপকালে জানাগেছে, ‘রুই-কাতল বিক্রি হয়েছে ৪৫০, তেলাপিয়া ১২০-১ ৩০ টাকা, পাঙ্গাস ১৩০ টাকা, ইলিস প্রকারভেদে ৪৫০-৫০০ টাকা, বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১২ শত টাকার মধ্যে। কৈ মাছ ১২০, পোমা ২০০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদের দাবি অনুযায়ী মাছের দাম বেশি হলেও বাজারজুরে প্রায় সকল ধরের মাছের আধিক্য দেখা গেছে। অপরদিকে নিত্য পণ্য এবং মাছ, মাংস ও কাঁচা তরকারির ন্যায় মূল্য বেড়েছে মৌসুমী ফলেরও। প্রতি পিস তাল ২০ টাকা, পেয়ারা প্রতি কেজি ৩০ টাকা (কাঁচা), পাকা পেয়ারা ১০-১৫ টাকা, আমড়া এক কুড়ি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বর্তমানে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানির কারণে ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সবজি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে পাইকারী বাজারেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন অতিবাহিত হলে সবজিসহ অন্যান্য পণ্য-দ্রব্যের মূল্য কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ বৃষ্টি এবং পানির অজুহাতে কিছু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। অতি মুনাফা লোভী এসব ব্যবসায়ীরা নিজেদের মনগড়া দামে বিভিন্ন তরি-তরকারি বিক্রি করছে। তাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশনের বাজার তদারকিমূলক অভিযান জোরালো করার দাবিও তুলেছেন ক্রেতারা।