রংপুর নগরীসহ জেলার বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু থামেনি এখনো ভাঙন । তিস্তা ও ঘাঘটসহ জেলার অন্যান্য নদ-নদীগুলোতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়েছে পড়েছে নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। এদিকে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে লহ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকায় তিস্তার বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধটি। পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার ২ ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে স্কুল- মাদরাসা, মসজিদ ও বাড়ি ঘর।
শ্রাবণের বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তা ও ঘাঘট বেষ্টিত নিম্নাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অশান্ত তিস্তার স্রোতে নদীপাড়ে ভাঙন থামছেই না। বিভিন্ন জায়গাতে বাড়িঘর, গাছপালা আর বসতভিটা আবাদী জমি ক্ষেতের ফসল নদীর পেটে চলে যাচ্ছে।
জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, হারাগাছ, পীরগাছা, তারাগঞ্জ উপজেলাসহ রংপুর মহানগরীরও বেশ কিছু এলাকাতে ছোট ছোট ব্রিজ, কালভার্ট ও যান চলাচলের সড়ক মারাত্মক ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। কোথাও কোথাও বাঁধের পাশাপাশি ব্রিজ ও কালভার্টের সংযোগ সড়ক ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গঙ্গাচড়ায় তিস্তার বন্যা নিরপত্তা বাঁধের তিনটি অংশে প্রায় ১৩০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে।
এদিকে ভাঙন ঠেকাতে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) জিও ব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে। তবে চাহিদার তুলনায় জিও ব্যাগের সংখ্যা অনেক কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের গাটুপাড়ায় ৪০ ও বেরাতি পাড়ায় ৩০ মিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সিসি ব্লক ধ্বসে গেছে।
এদিকে, গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চরচিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চরের প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু জানিয়েছেন।
অন্যদিকে নোহালী ইউনিয়নের ফোটামারি ‘টি হেড গ্রোয়েন’ ও আলসিয়াপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ ভাঙনের মুখে পড়ায় সেখানেও জিও ব্যাগে বালু ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সড়ক ভেঙে যাওয়ায় গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক থেকে গাউছিয়া বাজার এবং পূর্ব রমাকান্ত থেকে গাউছিয়া বাজার যাওয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এখন পর্যন্ত গঙ্গাচড়ায় ৩টি ব্রিজের সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। এতে করে দুইটি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাগঞ্জ, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক বাড়িঘর ও শতশত একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানেও হুমকির মুখে আছে যোগযোগ ব্যবস্থা।
এদিকে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে রংপুর মহানগরীর দমদমা ব্রীজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেই সাথে লক্ষণপাড়া ও শরেয়ারতল মোল্লাপাড়ায় সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির তোড়ে ওই গ্রামম দুটির মূল সড়কে সৃষ্ট ভাঙনে কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়াও নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্নস্থানে কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি পাকা সড়কেরও ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, ভাঙন রোধে তিস্তাসহ অন্যান্য নদী এলাকা খোঁজ নিয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও বাঁধ রক্ষায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। অনেক জায়গাতে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনসহ স্থানীয়রা মিলে ধস মোকাবিলায় কাজ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যার কারণে হুমকির মুখে থাকা যোগযোগ ব্যবস্থার প্রতি খেয়াল রয়েছে। ভাঙন রোধে সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ব্রিজগুলো রক্ষা ও সংযোগ সড়ক তৈরিতে ব্রিজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, এলজিইডি বা জেলা পরিষদ পরিকল্পনা ছাড়াই তাদের সুবিধা মতো সংস্কার কাজ করছেন বলে তিনি জানান।